সম্প্রতি নতুন একটি সোনার খনির সন্ধান পাওয়া গেছে চীনের হুনান প্রদেশে। খনিটিতে এক হাজার টন সোনা মজুত রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে গবেষকদের ধারণা। ধারণা করা হচ্ছে, এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোনার খনি হতে পারে মজুতের দিক থেকে। যদিও এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হুনানের জিওলজিক্যাল ব্যুরোর বরাতে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, সম্প্রতি প্রদেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পিংজিয়াং কাউন্টিতে এই সোনার খনির সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানে যে পরিমাণ সোনা মজুত আছে তার দাম আনুমানিক ৬০০ বিলিয়ন ইউয়ান।
এদিকে ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে স্বর্ণ উত্তোলনের দিক থেকে শীর্ষ ১০টি খনির তালিকা তৈরি করেছিল মাইনিং টেকনোলজি। গ্লোবাল ডাটার তথ্য অনুসারে তালিকাটি তৈরি করা হয়। বিশ্বে বিভিন্ন খাতের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজ করে গ্লোবাল ডাটা। মাইনিং টেকনোলজির তালিকা অনুযায়ী উত্তোলনের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষ ১০ সোনার খনির তুলে ধরা হলো।
১ মুরুনতাউ খনি
মুরুনতাউ সোনা খনিটির অবস্থান উজবেকিস্তানের নাভোই ভিলোয়াতি এলাকায়। নাভোই মাইনিং অ্যান্ড মেটাললারজি কম্বিন্যাট কোম্পানি এই খনিটির মালিক। এটি একটি উন্মুক্ত খনি। এটি একটি গ্রিনফিল্ড খনিও। অর্থাৎ এখান থেকে আগে কখনো সোনা উত্তোলন করার ইতিহাস নেই।
১৯৫৮ সালে মুরুনতাউ সোনার খনিটি আবিষ্কার করা হয়। এর দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এবং প্রস্থ তিন কিলোমিটার। এই খনি থেকে ২০২৩ সালে ১৮ লাখ আউন্স পরিমাণ সোনা উত্তোলন হয়েছে । মুরুনতাউ সোনা খনিতে ২০৩২ সাল পর্যন্ত উত্তোলন কার্যক্রম চলার কথা।
২ কারলিন খনি
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যে কারলিন সোনার খনিটির অবস্থান। বিশ্বের সবচেয়ে বড় খনির তালিকায় নাম লেখানো এই খনিটির মালিক বারিক গোল্ড। উন্মুক্ত ও ভূগর্ভস্থ-দুইভাবেই এই খনি থেকে সোনা উত্তোলনের কাজ চলে। এই খনিত ২০৩২ সাল পর্যন্ত কার্যক্রম চলার কথা। ১৫ লাখ ৯০ হাজার আউন্স পরিমাণ সোনা উত্তোলন করা হয়েছে ২০২৩ সালে কারলিন সোনার খনি থেকে।
৩ অলিম্পিয়াদা খনি
রাশিয়ার ক্রাসনোয়ারস্ক ক্রাই এলাকায় অলিম্পিয়াদা সোনা খনিটির অবস্থান। এটি একটি উন্মুক্ত খনি। এর মালিকানা প্রতিষ্ঠান পলিয়ুস। এটি একটি ব্রাউনফিল্ড খনি। অর্থাৎ এই খনি থেকে আগেও সোনা উত্তোলন করার ইতিহাস আছে।
১৯৭৫ সালে অলিম্পিয়াদা সোনার খনিটি আবিষ্কার করা হয়। ১৯৮০-এর দশকে খনিটিকে প্রস্তুত করার কাজ শুরু হয়। আর এখান থেকে সোনা উত্তোলন শুরু হয় ১৯৯৬ সালে। এই সোনার খনিতে কাজ চলবে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত ।
৪ কর্টেজ খনি
কর্টেজ খনিটিরও অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যে। এই খনির মালিকানাও বারিক গোল্ডের। এখানে উন্মুক্ত এবং ভূগর্ভস্থ দুই পদ্ধতিতেই সোনা উত্তোলন করা হয়। এটি একটি ব্রাউনফিল্ড খনিও। অর্থাৎ এই খনি থেকেও আগে সোনা উত্তোলনের ইতিহাস আছে।
ধারণা করা হয় ২০৩১ সাল নাগাদ এই খনিতে সোনা উত্তোলনের কার্যক্রম শেষ হবে এবং ২০২৩ সালে কর্টেজ খনি থেকে ১০ লাখ আউন্স সোনা উত্তোলন করা হয়েছিল।
৫ গ্রাসবার্গ ব্লক কেভ খনি
গ্রাসবার্গ ব্লক কেভ সোনা খনিটি একটি ভূগর্ভস্থ খনি। এর অবস্থান ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়াতে। মাইনিং ইন্ডাস্ট্রি ইন্দোনেশিয়া এই খনিটির মালিক। এটি একটি ব্রাউনফিল্ড খনি।এখানে উন্মুক্ত এবং ভূগর্ভস্থ দুই পদ্ধতিতেই সোনা উত্তোলন করা হয়।
২০২৩ সালে গ্রাসবার্গ ব্লক কেভ সোনার খনি থেকে ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬১ আউন্স পরিমাণ সোনা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০৪১ সাল পর্যন্ত এই খনিটিতে কাজ চলার কথা।
৬ বডিংটন খনি
বডিংটন খনি অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম অংশে অবস্থিত একটি সুবিখ্যাত স্বর্ণ এবং তামার খনি। এটি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। বডিংটন খনিটি ১৯৮৭ সালে খনন কাজ শুরু করে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে কার্যক্রম চালিয়েছে। বর্তমানে এটি নিউমন্ট করপোরেশনের মালিকানাধীন, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্বর্ণখনি পরিচালনাকারী কোম্পানি। বডিংটন খনি বিশ্বব্যাপী অন্যতম বৃহৎ স্বর্ণ উৎপাদক। এর পাশাপাশি এখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তামাও উৎপাদিত হয়। এটি আধুনিক খনি পরিচালনা প্রযুক্তি এবং টেকসই খনির কৌশল ব্যবহার করে পরিচালিত হয়। ৭ লাখ ৮৬ হাজার ১৭ আউন্স পরিমাণ সোনা ২০২৩ সালে এই খনি থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।
৭ লিহির খনি
পাপুয়া নিউ গিনির নিউ আয়ারল্যান্ডে লিহির সোনা খনিটির অবস্থান। এটিও নিউমন্টের মালিকানাধীন খনি। এটি একটি উন্মুক্ত খনি। ১৯৮৩ সালে খনিটি আবিষ্কার হয়।
২০৪৯ সাল পর্যন্ত এই খনিতে কার্যক্রম চলবে বলে ধারণা করা হয় এবং ২০২৩ সালে লিহির খনি থেকে ৭ লাখ ৮০ হাজার আউন্স পরিমাণ সোনা উত্তোলন করা হয়েছে। ।
৮ পুয়েবলো ভিয়েজো খনি
একটি উন্মুক্ত খনি পুয়েবলো ভিয়েজো খনিটি । ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের স্যানশেজ রামিরেজ এলাকায় এর অবস্থান। বারিক গোল্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের খনিটির মালিকানা।
পুয়েবলো ভিয়েজো খনিটি একটি ব্রাউনফিল্ড খনি। ২০১২ সালের আগস্টে এই খনিতে সোনা উত্তোলন শুরু হয়। আর এখানে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন শুরু হয় ২০১২ সালের শেষের দিকে। ২০২৩ সালে খনিটি থেকে ৭ লাখ ৬৭ হাজার ১৫ আউন্স সোনা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০৪০ সাল পর্যন্ত এই খনিতে কাজ চলবে বলে ধারণা করা হয়।
৯ কিবালি খনি
কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে কিবালি খনিটির অবস্থান। এখানে উন্মুক্ত ও ভূগর্ভস্থ দুই পদ্ধতিতে সোনা উত্তোলন করা হয়ে থাকে। এর মালিক অ্যাংলো গোল্ড অ্যাশান্টি। ২০২৩ সালে কিবালি খনি থেকে ৭ লাখ ৬২ হাজার ২২ আউন্স পরিমাণ সোনা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০৩৬ সাল নাগাদ এ খনিতে সোনা উত্তোলন কার্যক্রম শেষ হবে বলে ধারণা করা হয়।
১০ লুলো গুনকোতো খনি
লুলো-গুনকোতো সোনা খনিটির অবস্থান মালির কায়েস এলাকায়। এখানে উন্মুক্ত ও ভূগর্ভস্থ দুই পদ্ধতিতেই সোনা উত্তোলন করা হয়। এর মালিকানা প্রতিষ্ঠান বারিক গোল্ড। এটি একটি ব্রাউনফিল্ড খনি। লুলো গুনকোতো খনিতে ২০২৩ সালে ৬৮৩ লাখ ৭৫ হাজার আউন্স পরিমাণ সোনা উত্তোলন করা হয়েছে।২০৩৭ সাল পর্যন্ত এই খনিতে উত্তোলন কাজ চলার কথা।
আরও পড়ুন বিশ্বের বিপজ্জনক রাস্তা কোন গুলো
2 thoughts on “বিশ্বের শীর্ষ ১০ সোনার খনি কোনগুলো”