বিশ্বের বিপজ্জনক রাস্তা

বিশ্বের বিপজ্জনক রাস্তা কোন গুলো

আন্তর্জাতিক
Spread the love

গাড়িচালকদের জন্য সড়কে ট্রাফিক জ্যাম, রক্ষণাবেক্ষণের কাজসহ নানা ধরনের ঝক্কি নিত্যদিনের ঘটনা। তারপরেও চালকদের থেমে থাকার কন ফুরসত নেই। প্রতিদিন ছুটে যেতে হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে সব প্রতিবন্ধকতা সামলে । তবে বিশ্বের নানা স্থানে এমন কিছু রাস্তা আছে, মনে বেজে উঠতে পারে ভয়াবহ বিপদের অশনিসংকেত। এমনই ১০টি বিপজ্জনক রাস্তার তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি সায়েন্স ফোকাস ম্যাগাজিন। পাঠকদের জন্য এসব সড়কের খুঁটিনাটি তুলে ধরা হলো।

১. কেলং কিশ্তওয়ার সড়ক, ভারত

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর এবং হিমাচল প্রদেশের মধ্যবর্তী সীমান্তে কেলং কিশ্তওয়ার সড়কের অবস্থান । ২৩৫ কিলোমিটার এটির দৈর্ঘ্য । পাথর ও মাটির টুকরা দিয়ে ভরা এই সড়কের এক পাশে সুবিশাল পাহাড়ের সারি আর অন্য পাশে প্রায় এক হাজার ফিট নিচ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। কোনো প্রতিবন্ধক পিলারসে সুরক্ষার জন্য নেই । গাড়ি এদিক-সেদিক হলে এই সড়ক ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। বিশ্বের বিপজ্জনক সড়কগুলোর মধ্যে অন্যতম কেলং কিশওয়ার সড়ক।

ইবারস্কা ম্যাজিস্ট্রালা সড়ক, সার্বিয়া

‘ব্ল্যাক হাইওয়ে’, ‘স্টেট রোড ২২’ বা ‘ইবার হাইওয়ে’ নামে সার্বিয়ায় স্থানীয়ভাবে এ সড়ক পরিচিত। দেশটির সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ব্যস্ততম সড়ক এটি। সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের সঙ্গে  মহাসড়কটি দেশটির অন্যান্য বৃহৎ শহর, মন্টেনেগ্রোসহ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশকে সংযুক্ত করেছে। সড়কটির দৈর্ঘ্য ২৯৮ কিলোমিটার। প্রশস্ত এই সড়কের অনেক স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে, যার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। রাতে দুর্ঘটনা বেশি হয়। 

৩ ট্রান্সফাগারাসান, রোমানিয়া

ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর সড়কগুলোর একটি রোমানিয়ার ট্রান্সফাগারাসান মহাসড়ক । যা ইউরোপের অন্যতম বিপজ্জনক সড়কও।

উঁচু–নিচু এবং আঁকাবাঁকা এই পাহাড়ি সড়ক কোথাও কোথাও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার মিটারের বেশি উচ্চতায় উঠে গেছে। ১৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি দিয়ে যেতে চোখে পড়বে অনিন্দ্যসুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য। প্রতিবছরই পর্যটকেরা ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক, বিশাল উচ্চতা এবং সুড়ঙ্গের কারণে এই সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়েন। স্থানীয় মেষপালকরা ভেড়া চারণভূমিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পথটি ব্যবহার করে। গাড়িচালকেরা সড়কের মাঝখানে ভেড়ার পালের কারণেও অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হন ।

৪ স্কিপারস ক্যানিয়ন সড়ক, নিউজিল্যান্ড

স্কিপারস ক্যানিয়ন নিউজিল্যান্ডের একটি গিরিখাত। এটির ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে শটওভার নদী। ১৮৬২ সালে এই এলাকায় সোনার খনি আবিষ্কৃত হয়েছিল। তখন খনিতে যাওয়ার জন্য গিরিখাতের মধ্য দিয়ে একটি সড়ক নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। এ কারণে খনি০শ্রমিকেরা পাথর খোদাই করে স্কিপারস ক্যানিয়ন সড়ক নির্মাণ করেন।
বৃষ্টি হলে সড়কটি খুব পিচ্ছিল হয়ে পড়ে গিরিখাতের নরম পাথরের কারণে । আবার পাথর ভেঙে সড়কে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকে শুষ্ক মৌসুমে । ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি একমুখী যাতায়াতের জন্য বেশ প্রশস্ত।

জেমস ডাল্টন মহাসড়ক, যুক্তরাষ্ট্র

৬৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ জেমস ডাল্টন মহাসড়ক যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় অবস্থিত। ‘আইস রোড ট্রাকার্স’–নামক টেলিভিশন শো এর জন্য সড়কটি অনেক জনপ্রিয়। রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে আলাস্কার একজন প্রকৌশলীর নামে। এটি তেল ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য জ্বালানি ও সরবরাহ পরিবহনের জন্য প্রধান পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সড়কটির মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পাকা, বাকি অংশ আলগা নুড়ি ও পাথর দিয়ে তৈরি। বরফ, তুষারপাতসহ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এই সড়কে গাড়িচালকদের প্রায়ই বিপদে পড়তে হয়। এ ছাড়া মেরু ভালুকের আনাগোনাও কখনো কখনো ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৬ জোজিলা পাস, ভারত

লাদাখ অঞ্চলে কাশ্মীর উপত্যকার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ভারতের জোজিলা পাস । সড়কটিতে প্রচুর পরিমাণে বরফ ও তুষারপাত হয়ে থাকে হিমালয়ের পর্বতমালার উঁচুতে অবস্থান হওয়ার কারণে । যার ফলে মাসের পরপর বন্ধও থাকে এই সড়ক। দুটি গাড়ি চলাচলের জন্য সড়কটি যথেষ্ট প্রশস্ত। সড়কের এক পাশে সুউচ্চ পাহাড়, অন্য পাশে গভীর খাত। কিন্তু সুরক্ষার জন্য কোনো প্রতিবন্ধক পিলার নেই এ সড়কে। ফলে সামান্য অসচেতনতার কারণে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।

৭ ফেইরি মেডোজ সড়ক, পাকিস্তান

পাকিস্তানে অবস্থিত ফেইরি মেডোজ সড়ক কারাকোরাম মহাসড়ককে ফেইরি মেডোজ জাতীয় উদ্যানের তাতোর গ্রামের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। পাহাড়ের খাঁজ কেটে তৈরি সড়কটি কিছু কিছু জায়গায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার মিটার উচ্চতায় উঠেছে। এটি দিয়ে একই সময়ে পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলতে পারে না। নেই কোনো সুরক্ষা প্রতিবন্ধক। এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে খাদের নিচে পড়ে যাওয়ার তীব্র ঝুঁকি থাকে। অত্যন্ত ঝুকিপুর্ণ তাই, শুধু স্থানীয় ব্যক্তিদের গাড়ি চালানোর অনুমতি রয়েছে।

ইউঙ্গাস সড়ক, বলিভিয়া

বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাস্তা গুলোর মধ্যে অন্যতম বলিভিয়ার উত্তর ইউঙ্গাস সড়কটি যার আরেক নাম ‘মৃত্যু সড়ক’ বলে পরিচিত।  বলিভিয়ার রাজধানী লা পাজ শহরকে ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি দেশটির ইউঙ্গাস অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এটির পার্শ্ববর্তী এলাকায় অপেক্ষাকৃত নিরাপদ একটি বিকল্প সড়ক তৈরি হওয়ার আগপর্যন্ত প্রতিবছর এ সড়কে ২০০-৩০০ প্রাণহানি হতো বলে দাবি করা হয়। পাহাড়ি এই সড়কের পুরোটা নুড়িপাথর ছাড়া আর কিছুই নেই। কুয়াশা ও বৃষ্টি এ সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।  

৯ সিচুয়ান-তিব্বত মহাসড়ক, চীন

সিচুয়ান-তিব্বত মহাসড়ক বিশ্বের উচ্চতম সড়কগুলোর মধ্যে একটি। এ সড়কে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ উচ্চতা। তিব্বতের কুইর পর্বতের ভেতর দিয়ে নির্মিত ঘূর্ণমান সড়কটি চীনের সিচুয়ান প্রদেশকে তিব্বতের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। যেকোনো চালকের জন্য তুষারপাত এবং ভূমিধস এড়িয়ে একমুখী এই সড়কে অনেক উচ্চতায় গাড়ি চালানো একটি পরীক্ষা। ১৫ দিন সময় লাগতে পারে ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে কখনো কখনো পুরো মহাসড়ক পার হতে ।

১০ বেবার্ট ডি৯১৫, তুরস্ক

তুরস্কের বেবার্ট ডি৯১৫ সড়কটিকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক রাস্তা। অসংখ্য সর্পিল বাঁকযুক্ত সড়কটি তৈরি করা হয়েছে পাহাড় কেটে। এটি উত্তর উপকূলে কৃষ্ণ সাগরকে বেবার্ট শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। একসময় এই সড়ক প্রাচীন সিল্ক রোড চীন ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য পথের অংশ ছিল ।  এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক স্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য। এটিতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে সড়কের খারাপ অবস্থা এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ।

আরও পড়ুন বিশ্বের ১০ প্রাচীন শহর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *