৫ই আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ভারতে। বাংলাদেশের ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন এই প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রদের যে আন্দোলন ছিল তা মূলত সরকার পতনের আন্দোলন ছিল না। ছাত্রদের এই আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন হিসেবে। পরবর্তীতে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই আন্দোলনে রূপ নেয় একদফা আন্দোলনে। আর তা হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আস্তে আস্তে এই আন্দোলনে যোগদান করেন শিক্ষক, পিতা-মাতা, সাধারণ জনতা, সাবেক সেনা সদস্য, আইনজীবী ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গ। এই আন্দোলন পরিণত হয় এক গণঅভ্যুত্থানে। পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা পালিয়ে আশ্রয় নেন ভারতে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু:
২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনের সময় ৪ই অক্টোবর ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডের চাকরিতে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করা হয়েছিল। যেটি ২০২৪ সালের ৫ই জুন হাইকোর্ট আবার পুনর্বহাল করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোন সংস্কার আন্দোলন আবারও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। ছাত্র-ছাত্রীরা মুক্তিযোদ্ধার কোটা ৩০% করে কমিয়ে সংস্কার করা কথা বলেন।
ছাত্রছাত্রীদের উপরে গুলি ও নির্যাতন:
ছাত্র -ছাত্রীরা এই মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০% থেকে সংস্কার করার কথা বললে সরকারি উচ্চ মহল থেকে নানা ধরনের সমালোচনা আসতে থাকে। ছাত্রছাত্রীরা পাল্টা জবাব দিতে থাকে। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকে। বাংলাদেশ সরকার গত ১৫ বছর থেকে অনেক গুম খুনের মাধ্যমে অনেক আন্দোলন দমন করেছে। এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলনে অবশ্যই একই পন্থা অবলম্বন করে। এতে করে কোটা আন্দোলন আরো জোরদার হতে থাকে। আন্দোলনের একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন মুক্তিযোদ্ধা নাতিপতিরা চাকরি পাবেনা তো রাজাকারের নাতিপতিরা চাকরি পাবে? প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে এ ধরনের কথা শোনার পর ছাত্রছাত্রীরা ক্ষোভে ভেঙে পড়ে। ছাত্রছাত্রীরা স্লোগান বের করে ‘তুই কে আমি কে রাজাকার রাজাকার কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার’। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে থাকে। তোদের এই আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করার ব্যবস্থা করা হয়। ছাত্ররা প্রথমে ছয় দফা পরে ৯ দফা দাবি পেশ করে। অন্যদিকে সরকারও এই আন্দোলন দমন করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা সারা দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তারা অসংখ্য ছাত্রদের গ্রেফতার করে এবং গুলি করে মেরে ফেলে। নিহতদের মধ্যে রংপুরের আবু সাঈদ অন্যতম।
ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট চালু:
ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে রাতের অন্ধকারে গ্রেফতার করে। ভয় দেখিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করা হয়। পাঁচদিন পর্যন্ত থাকার পরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করে দেওয়া হয় এবং দশ দিন পর মোবাইল ইন্টারনেট চালু করে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই পুলিশের গুলিতে অনেক ছাত্ররা নিহত হয়েছেন এবং হাজার হাজার গ্রেপ্তার হয়েছে। এতে ছাত্ররা আবার হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলন শুরু করে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকা অবস্থায় তারা একটা সংস্কার আন্দোলনের দাবি মেনে নিয়ে রায় প্রকাশ করে। কিন্তু এতগুলো মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা হলো কেন এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে ছাত্ররা পাশাপাশি যোগদেন ছাত্র-ছাত্রীর পিতা-মাতা। ছাত্র-ছাত্রীদের উপর গুলি করাতে পুলিশের পাশাপাশি অংশ নিয়েছিল ছাত্রলীগ। ছাত্রদের এই গুলির বিরুদ্ধে এবং ধরপাকরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ায় শিক্ষকগণ।
ছাত্র আন্দোলনের জনগণের অংশগ্রহণ:
প্রায় ১৬ বছর থেকে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামীলীগ। দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সরকার বিভিন্ন অপরাধ অপকর্ম করেছে। যা জনগণ কখনো মুখ খুলে বলতে পারেনি। কেরে নেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার। টানা চতুর্থবারের মাথায় নির্বাচিত হয়েছিল এই সরকার। শুধু প্রথমবারই সরকারকে জনগণ ভোট দিয়েছিল পরবর্তী তিনবার এই সরকারকে জনগণের ভোট দিতে পারেনি। পরবর্তী তিনবার জনগণকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রেখে তারা জোরপূর্বক বলতে থাকে জনগণের ভোটে তারা ক্ষমতায় এসেছে। মূলত নির্বাচনের সময় তারা রাতেই বেলট বাক্স ভর্তি করে রাখত। এছাড়া গুম, খুন, ঘুষ, সহ নানা অপরাধে জড়িত ছিল সরকার ও সরকারি বাহিনী। জনগণকে সেটা প্রকাশ করে দেয়নি এই সরকার। এছাড়াও দুর্নীতি ছিল লাগামহীন। ফলে ছাত্রদের এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে ফেলে এই সাধারণ জনতা। ছাত্রর ঘোষণা দেন এক দফা দাবির। তাহলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ। ছাত্রদের এই আন্দোলন হয়ে ওঠে জনতার আন্দোলন। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এই আন্দোলনে।
জুলাই থেকে আগস্টে আন্দোলন:
বহুল ঘটনার মাধ্যমেই শেষ হয়ে যায় জুলাই শুরু হয় আগস্ট। আগস্টে এসেও আন্দোলন আরো তীব্রতর হাতে থাকে। ছাত্র ও পুলিশ সহ একদিনে প্রায় একশোর উপরে মানুষের মৃত্যু হয় আগস্টের ৪ তারিখে। আগস্টের ৫ তারিখের কর্মসূচি ছিল গণভবন ঘেরাও করা। ৫ তারিখের মধ্যেই পরিস্থিতি অনেক বেগতিক হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্র জনতা দখল করে ফেলেন গণভবন। অর্জিত হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। উল্লাসে মেতে ওঠে সারা বাংলার জনগণ।
2 thoughts on “শেখ হাসিনার পদত্যাগঃ কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা”