বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটা ঢাকার মিরপুরে খেলতে চেয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসন্ন সিরিজের প্রথম টেস্টটি মিরপুরে ২১ অক্টোবর হওয়ার কথা। টেস্ট ক্যারিয়ারকে বিদায় বলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার মিরপুরে ম্যাচটি খেলে । কিন্তু,দেশে নিরাপত্তা ঝুকির কথা বুঝে ক্রীড়া উপদেষ্টার পরামর্শে দেশে আসেনি সাকিব।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম টেস্টের দলে সাকিবকে রেখেছে বিসিবি। সাকিবও দেশের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাত পর্যন্ত আসার পর থেমে গেছেন। দেশে ‘নিরাপত্তাঝুঁকি আছে’ উল্লেখ করে সেখান থেকে দেশে আসবেন না বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন সাকিব। একটি সূত্র বলছে, তিনি দুবাই থেকে আবার যুক্তরাষ্ট্র ফিরে যাবেন।
বাংলাদেশের অলরাউন্ডারের দেশে না ফেরার ঘোষণায় নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। আসলে কী কারণে সাকিব দেশে ফিরতে চাইছেন না—এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। সেই ধোঁয়াশা কেটেছে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার এক বিবৃতিতে।
গত কয়েক দিন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাকিবের বিরুদ্ধে কিছু দেয়াললিখন লিখেছেন সাকিব বিরোধীরা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে। সাকিবের বিরুদ্ধে এসব হওয়ার কারণ, তিনি শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রজনতার আন্দোলনের সময় ‘নীরব’ ছিলেন। তবে এই নীরব থাকার জন্য এ মাসের শুরুর দিকে এক ফেসবুক পোস্টে তিনি দুঃখপ্রকাশ করেছেন।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘ সাকিব তার রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরে জনমনের ক্ষোভ নিরসনে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পোস্ট দিলেও অতি সাম্প্রতিক প্রতিবাদে লক্ষ্য করা হয়েছে যে তা যথেষ্ট ছিল না। আবার যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরও তা করার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে।’
নিজেও চেয়েছেন সাকিবের মতো একজন ক্রিকেটার দেশের মাটিতে অবসর নিক জানিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেছেন, পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, ‘সাউথ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের মধ্যকার সিরিজে কোনপ্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতেই আপাতত দেশে খেলতে আসার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে বিসিবিকে পরামর্শ দিতে হয়েছে। খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার আশু ব্যবস্থা হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’
মিরপুরে বিক্ষোভ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
সাকিব আল হাসানকে বাংলাদেশ দলে না খেলানোর দাবি জানিয়েছেন একদল বিক্ষোভকারী। আজ দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের সামনে ‘মিরপুর ছাত্রজনতা’র ব্যানারে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে বিক্ষোভকারীরা বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ্ হয়, সাকিবকে মিরপুরে খেলানো হলে ম্যাচের দিন কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
কর্মসূচির জেরে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি হলে বা দেশের ক্রিকেট কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিসিবিকে এর দায়ভার নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। সাকিবকে খেলতে না দিতে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ফটকে যখন বিক্ষোভ চলছিল, তখন ভেতরে একাডেমি মাঠে অনুশীলন করছিল দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় ক্রিকেট দল। ২১ অক্টোবর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম টেস্ট শুরু হবে।
বুধবার বিকেলে এই টেস্টের জন্য সাকিবকে দলে রেখেই দল ঘোষণা করে নির্বাচকরা । ম্যাচটি খেলতে আজ রাতে দুবাই হয়ে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল সাকিবের। তবে দুবাইয়ে অবস্থানরত সাকিব জানান, আপাতত দেশে আসা হচ্ছে না তাঁর। এর মধ্যেই আজ দুপুরে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সামনে জড়ো হন শ খানেক ব্যক্তি। তাঁরা সাকিবের খেলার বিরোধিতা করে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে নানা বক্তব্য তুলে ধরেন। এর মধ্যে ছিল ‘নো এন্ট্রি সাকিব’, ‘সাকিব তুমি মিরপুরের ক্রিকেট পিচ চিনতে পারো। কিন্তু আমরা মিরপুরের রাজপথ চিনে বড় হইছি’, ‘আমার ভাই কবরে, সাকিব কেন বাইরে’, ‘হাসিনার দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’।
সাকিবের বিরুদ্ধে স্লোগানের সময় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রধান গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভেতরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা অবস্থান নেন। কিছুটা দূরে ছিল সেনাবাহিনী সদস্যদের দুটি গাড়ি, যাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলকে নিরাপত্তা দিতে মাঠে এসেছিলেন। একপর্যায়ে প্রধান ফটকের বাইরে বিক্ষোভকারীদের পাঁচ প্রতিনিধি বিসিবি কার্যালয়ে স্মারকলিপি দিতে যান। বিসিবি সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী এখন আইসিসি বৈঠকে যোগ দিতে দুবাইয়ে। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন বিসিবি প্রশাসন বিভাগের প্রধান মেজর (অব.) হাসিব।
স্মারকলিপিতে বিসিবি সভাপতি কে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘সাকিব আল হাসান কে আবার বাংলাদেশের জার্সি পড়িয়ে খেলতে দেওয়ার মাধ্যমে আপনি নিজে একজন হাসিনার দালাল, ভোটচোর,শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির অপরাধী, দুর্নীতিবাজ, জুয়ার দালালের শরীরে আমাদের সবার প্রিয় মাতৃভূমির জার্সি তুলে দিচ্ছেন।’
বাংলাদেশ জাতীয় দল থেকে সাকিবকে অতিদ্রুত বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আরও বলা হয়, তা না করলে মিরপুর এলাকায় খেলার দিন কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। ‘এর ফলে যদি কোনো অরাজকতা সৃষ্টি হয়, বাংলাদেশের মাটিতে ভবিষ্যতে অন্য দেশগুলো খেলতে না আসে কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আইসিসির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞাসহ অন্য কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সে ক্ষেত্রে সব দায়ভার বিসিবি প্রধান হিসেবে আপনাকে নিতে হবে।’
শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ফটকের সামনে যেখানে বিক্ষোভ হয়েছে, একাডেমি মাঠ সেখান থেকে খুব দূরে নয়। বিসিবি জানিয়েছে, বিক্ষোভের বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দল কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তবে এ ঘটনার পর দক্ষিণ আফ্রিকা দলের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এবার মিরপুরে ‘সাকিবিয়ান’দের স্লোগান
গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ‘মিরপুরের ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে একটা দল সাকিববিরোধী অবস্থান নিয়েছিল। সাকিবকে দল থেকে বাদ দেওয়ার দাবি তুলে তাঁরা বক্তৃতা-বিবৃতিও দিয়েছেন। সাকিবকে বাদ না দিলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে বলে বিসিবি বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে তাঁদের পক্ষ থেকে।
আজ দুপুরে নিজেদের ‘সাকিবিয়ান’ দাবি করে একটি দল আবার মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে সাকিবের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। ‘উই স্ট্যান্ড উইথ সাকিব আল হাসান’ হ্যাশট্যাগ দেওয়া একটি ব্যানার নিয়ে স্টেডিয়ামের দুই নম্বর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ‘সাকিব’, ‘সাকিব’ স্লোগান দিয়েছেন সেই সমর্থকেরা। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘বাংলার নবাব সাকিব আল হাসানকে নিয়ে কোনো রকম ষড়যন্ত্র আমরা সাকিবিয়ানরা মেনে নেব না’।
আরও পড়ুন সাকিবের রবার স্ট্র্যাপ, অন্য ক্রিকেটারদের কি?
1 thought on “ক্রীড়া উপদেষ্টার পরামর্শে দেশে আসেনি সাকিব”