ইসলামে বিয়ে এবং পরিবার গঠনের উদ্দেশ্য

ইসলামে বিয়ে এবং পরিবার গঠনের উদ্দেশ্য

অন্যান্য
Spread the love

মানবসভ্যতার আদি প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার। ইসলামে বিয়ে এবং পরিবার গঠনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবজীবনে স্থিতি, শৃঙ্খলা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এর মাধ্যমেই সভ্যতার সূচনা ও বিকাশ। পরিবারের প্রথম সূচনা বাবা আদম (আ.) আর মা হাওয়া (আ.)–এর দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্য দিয়ে।  এটি এক পবিত্র বন্ধন যা মানবিক ও সামাজিক জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ সুগম করে। ইসলামে বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা, সহযোগিতা, এবং পারস্পরিক দায়িত্বশীলতার ভিত্তিতে একটি পরিবার গড়ে ওঠে যা সমাজের ভিত্তি মজবুত করে।

দাম্পত্য জীবনের সূচনা হয় বিয়ের মাধ্যমে। বিয়ে একটি ইবাদত। ইসলামের দৃষ্টিতে মানবজীবনের যাবতীয় কর্মকালই ইবাদত। দাম্পত্য জীবন মানবজীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যুগলবন্দী দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য হলো সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা।

মহান আল্লাহ কোরআন মাজিদে বলেন, ‘আর আল্লাহর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে তোমাদের জীবন সঙ্গীনিদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়ার উদ্রেক করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা-৩০ রুম, বিয়ের অন্যতম ফরজ অনুষঙ্গ হলো মহর।

আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘আর তোমরা নারীদের তাদের মহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে; সন্তুষ্ট চিত্তে তারা মহরের কিয়দংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বচ্ছন্দে উপভোগ করবে।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৪)। বরের সামর্থ্য ও কনের যোগ্যতায় মহরের পরিমাণ উভয় পক্ষের সম্মতিতে নির্ধারিত হবে। এর জন্য সর্বনিম্ন কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারিত করা হয়নি। 

মুজতাহিদ ফকিহদের আলোচনামতে,,সর্বনিম্ন ১০ দিরহাম বা আড়াই ভরি রৌপ্যের সমান মহরের পরিমাণ । সর্বোচ্চ পরিমাণ মহরের সীমিত করা নেই। 

তবে মহরের পরিমাণ এত কম হওয়া উচিত নয়, যাতে মেয়ের সম্মান ও অধিকার ক্ষুণ্ন হয় এবং এত বেশি হওয়াও বাঞ্ছনীয় নয়, যা ছেলের ওপর জুলুম হয়। মহরের অর্থ একান্তই স্ত্রীর। 

বাংলাদেশ সরকারের সংবিধিবদ্ধ আইনেও যৌতুক শাস্তিযোগ্য ও দণ্ডনীয় অপরাধ। যৌতুকের শর্তে বিয়ে সম্পাদিত হলে, বিয়ে কার্যকর হয়ে যাবে; কিন্তু যৌতুকের শর্ত অকার্যকর বলে বিবেচিত হবে। 

ইসলামি শরিয়তের বিধানমতে, অবৈধ শর্ত পালনীয় নয় বরং বাধ্যতামূলকভাবেই তা বর্জনীয়। যে বিয়েতে যৌতুক লেনদেন হয় বা যৌতুকের শর্ত থাকে, সেসব বিয়ে বর্জন করা কর্তব্য। যৌতুকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ও সোচ্চার হওয়া আমাদের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব। 

ইসলামি শরিয়তের বিধানাবলির অন্তর্নিহিত দর্শন বা উদ্দেশ্য তথা ‘মাকাসিদুশ শরিয়াহ’র পাঁচ পাঁচটিই বিদ্যমান রয়েছে বিয়ের মধ্যে। যথা জীবনের সুরক্ষা, সম্পদের সুরক্ষা, জ্ঞানের সুরক্ষা, বংশধারার সুরক্ষা ও ধর্মের সুরক্ষা। বিয়ের মাধ্যমে দু’জন মানুষ একটি পরিবারের ভিত্তি স্থাপন করে এবং তারা একে অপরের জন্য সঙ্গী ও সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। এটি ব্যক্তি জীবনে নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, বিয়ে মানুষকে জৈবিক চাহিদা পূরণের বৈধ উপায় প্রদান করে, যা অবৈধ সম্পর্ক ও পাপ থেকে বাঁচার উপায়।

পরিবার গঠন ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি শিশুর সঠিক পরিচর্যা, শিক্ষা এবং নৈতিক গুণাবলী গঠনের প্রধান স্থান। সন্তানদের সঠিক মানসিক ও ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। পরিবার একটি প্রশান্তির কেন্দ্র, যা মানুষকে ভালোবাসা, সমর্থন ও নিরাপত্তা প্রদান করে।

সার্বিকভাবে, ইসলামে বিয়ে ও পরিবার গঠনের উদ্দেশ্য হলো মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, করুণা, দায়িত্ব ও নৈতিকতা বৃদ্ধি করা, সমাজকে শান্তি ও কল্যাণের দিকে পরিচালিত করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

প্রিয় নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘বিবাহ করা আমার সুন্নত, যে আমার সুন্নত থেকে বিরাগভাজন হয়, সে আমার উম্মত নয়।’ (মুসলিম: ১৪০১) 

সংক্ষেপে, ইসলামে বিয়ে ও পরিবার গঠন মানুষের ব্যক্তিগত, সামাজিক, এবং ধর্মীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং মানবিক সম্পর্কের মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশনার প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের অন্যতম মাধ্যম।

আরও পড়ুন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *