বিশ্বে নিষিদ্ধ গণহত্যাকারী

বিশ্বে নিষিদ্ধ গণহত্যাকারী রাজনৈতিক দল বা সংগঠন

আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ
Spread the love

গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার তথা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে। পরবর্তীতে দেখা যায়,বিগত ১৫ বছরের শাসনে আওয়ামীলীগ সরকার দেশে অসংখ্য গণহত্যা,খুন,গুমসহ নানা স্বেরাচারী আচরণ করেছে যা ছিল সম্পুর্ণ মানবাধিকারে চরম আঘাত। যার ফলে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন মহল থেকে আওয়ামী লীগ এই রাজনৌতিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়। কিন্তু, গণহত্যাকারী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়। অনেক দেশে গণহত্যায় জড়িত বা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দলগুলিকে নিষিদ্ধ করার জন্য আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এই ধরনের দলগুলোর নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্য হলো:

ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা: গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের জন্য দায়ী দল বা সংগঠনকে শাস্তি দেওয়া।

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষা করা: এই ধরনের দলের কার্যক্রম রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত করে।

সমাজে শান্তি বজায় রাখা: গণহত্যাকারী দলের নিষিদ্ধকরণ সমাজে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

যদিও গণহত্যায় জড়িত রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা যায়, এর কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভর করে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আইন, এবং জনগণের সমর্থনের ওপর।

চলুন জেনে নেওয়া যাক পৃথিবীতে দশটি গণহত্যাকারী রাজনৈতিক দলের গণহত্যা ও সেই দলগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার বিবরণ তুলে ধরা হলো।

ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি (নাজি পার্টি)

গণহত্যা: ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে অ্যাডলফ হিটলারের নেতৃত্বে নাজি পার্টি হোলোকাস্টে অংশ নেয়, যেখানে প্রায় ৬ মিলিয়ন ইহুদি ও লক্ষ লক্ষ অন্যান্য সংখ্যালঘু মানুষকে হত্যা করা হয়।

নিষিদ্ধ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ১৯৪৫ সালে মিত্রশক্তি জার্মানির নাজি পার্টিকে নিষিদ্ধ করে। ১৯৪৫-১৯৪৬ সালের ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে পার্টির শীর্ষ নেতাদের বিচার করা হয় এবং দলটি চিরতরে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

খেমার রুজ (Cambodian Khmer Rouge)

গণহত্যা: ১৯৭৫-১৯৭৯ সালে পল পটের নেতৃত্বে খেমার রুজ সরকার কম্বোডিয়ায় ১.৭ থেকে ২ মিলিয়ন মানুষের জীবন কেড়ে নেয়।

নিষিদ্ধ: ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামের সেনাবাহিনী খেমার রুজকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়। কম্বোডিয়ার Extraordinary Chambers in the Courts of Cambodia (ECCC) আদালত ২০০৭ সালে দলের শীর্ষ নেতাদের বিচার শুরু করে এবং দলটি চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ করা হয়।

বাথ পার্টি (ইরাক)

গণহত্যা: সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ১৯৮০-এর দশকে ইরাকের বাথ পার্টি কুর্দিশদের বিরুদ্ধে ‘আনফাল’ অভিযানে ৫০,০০০ থেকে ১০০,০০০ কুর্দিশ মানুষকে হত্যা করে।

নিষিদ্ধ: ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ইরাকের বাথ পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ২০০৪ সালের Transitional Administrative Law (TAL) অনুযায়ী, বাথ পার্টির সদস্যদের নিষিদ্ধ করা হয় এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।

রুয়ান্ডার হুতু পাওয়ার সরকার (MRND – Mouvement Révolutionnaire National pour le Développement)

গণহত্যা: ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডার হুতু সরকারের নেতৃত্বে ৮ লাখ তুতসি এবং মডারেট হুতুদের হত্যা করা হয়।

নিষিদ্ধ: গণহত্যার পর, ১৯৯৪ সালে Rwandan Patriotic Front (RPF) ক্ষমতায় আসে এবং MRND পার্টিকে নিষিদ্ধ করে। ১৯৯৪ সালের পর থেকে দলটি রুয়ান্ডার রাজনীতিতে নিষিদ্ধ রয়েছে এবং দলটির নেতাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করা হয়।

তুরস্কের ইত্তিহাদ ও তেরাক্কি পার্টি (Committee of Union and Progress – CUP)

গণহত্যা: ১৯১৫-১৯১৭ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের সময়ে আর্মেনীয় গণহত্যার জন্য ইত্তিহাদ ও তেরাক্কি পার্টি দায়ী ছিল, যেখানে আনুমানিক ১.৫ মিলিয়ন আর্মেনিয়ানকে হত্যা করা হয়।

নিষিদ্ধ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, ১৯১৮ সালে অটোমান সাম্রাজ্য ধসে পড়ে এবং CUP পার্টি নিষিদ্ধ হয়। সামরিক আদালতে দলের কিছু নেতার বিচার হলেও দলটি কার্যত বিলুপ্ত হয়।

বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় যুগোস্লাভিয়ার স্লোবোদান মিলোসেভিচের সরকার

গণহত্যা: ১৯৯০-এর দশকে বসনিয়া যুদ্ধের সময় যুগোস্লাভিয়ার শাসক দল জাতিগত নিধনে লিপ্ত ছিল, যার ফলে বহু মানুষ নিহত হয়।

নিষিদ্ধ: ১৯৯৫ সালে ডেটন শান্তি চুক্তির মাধ্যমে স্লোবোদান মিলোসেভিচের শাসনাধীন দলটি কার্যত নিষিদ্ধ হয়। ২০০২ সালে ICTY আদালতে মিলোসেভিচের বিচার শুরু হয়, তবে তার মৃত্যুর কারণে বিচার শেষ হয়নি।

ইন্দোনেশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টি (PKI)

গণহত্যা: ১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থকদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে ৫ লাখেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়।

নিষিদ্ধ: ১৯৬৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার সামরিক সরকার PKI পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দলটি এখনও নিষিদ্ধ রয়েছে এবং কমিউনিস্ট কার্যক্রম ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

স্পেনের ফ্রাঙ্কো সরকার (Falange Española)

গণহত্যা: ১৯৩৬-১৯৭৫ সালের মধ্যে ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর ফ্যাসিস্ট সরকার স্পেনে বিরোধীদের দমন ও হত্যা করে।

নিষিদ্ধ: ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর, ১৯৭৭ সালে স্পেনে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং ফ্রাঙ্কোর Falange Española পার্টি কার্যত নিষিদ্ধ হয়। স্পেনের নতুন সংবিধান ফ্যাসিবাদী কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (Mao’s Cultural Revolution)

গণহত্যা: ১৯৬৬-১৯৭৬ সালের মধ্যে মাও সেতুং-এর কালচারাল রেভোলিউশনের সময় লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।

নিষিদ্ধ: মাও সেতুং-এর মৃত্যুর পর ১৯৭৬ সালে কালচারাল রেভোলিউশনের সঙ্গে জড়িত কিছু নেতাকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ বিচারের আওতায় আনা হয়। তবে দলটি চীনে নিষিদ্ধ হয়নি, বরং সংস্কারপন্থীদের দ্বারা দলটি পুনর্গঠিত হয়।

নিকারাগুয়ার সমোযা পরিবার পরিচালিত জাতীয় রক্ষাকর্মী (Somozas’ National Guard)

গণহত্যা: নিকারাগুয়ার সমোযা শাসনামলে (১৯৩৬-১৯৭৯) বিরোধীদের দমন ও হত্যার জন্য জাতীয় রক্ষাকর্মী দায়ী ছিল।

নিষিদ্ধ: ১৯৭৯ সালে সান্দিনিস্তা বিপ্লবের মাধ্যমে সমোযা শাসন উৎখাত হয় এবং জাতীয় রক্ষাকর্মী নিষিদ্ধ হয়। নতুন সরকার সমোযা শাসনামলে জড়িতদের বিচার করে।

এছাড়া অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যায় পাকিস্তান হায়নাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার দায়ে বাংলাদেশে অন্যতম রাজনৈতিক দল ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ নিষিদ্ধ করা হয়।কিন্ত ১মাস পরেই দেশের আদালত জামায়াতে ইসলামীর নিষিজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *