স্কুলছাত্রীর মুখচ্ছবি পর্নো ভিডিও

স্কুলছাত্রীর মুখচ্ছবি ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও

বাংলাদেশ
Spread the love

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে তিনজনের গ্রুপে এক শিক্ষক মা দেখেন, শ্বেতাঙ্গ এক নারীর মুখে তাঁর  স্কুলছাত্রীর মেয়ের মুখের ছবি ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও ভিডিওটা তৈরি করা হয়েছে। গ্রুপে মেসেজ দিয়ে বলা হয়, ২০ লাখ টাকা না দিলে এই ভিডিও ‘ভাইরাল’ করে দেওয়া হবে।  আর এই গ্রুপের তিনজনের একজন তিনি, আরেকজন তাঁর সহকর্মী এবং তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছে ভিডিও প্রেরণকারী। 

গত ৮ জানুয়ারি ঘটনাটি প্রকাশ পায়। এরপর দুই দিনে বিভিন্ন গ্রুপে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে পুরো উপজেলার ছয় স্কুলছাত্রী ও  একজন শিক্ষকের স্ত্রীর মুখের ছবি ব্যবহার করে একাধিক পর্নো ভিডিও তৈরি করে বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।  পর্নো ভিডিওর ভয় দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে চারটি ভুক্তভোগী পরিবার থানায় গিয়ে অভিযোগ করেছেন।

ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম রেজাউল করিম স্কুলশিক্ষার্থীর ছবি ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও করার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ভুক্তভোগীদের মধ্যে চারটি পরিবার থানায় এসেছে। তারা জিডি করেছে। এর ভিত্তিতে সন্দেহভাজন হিসেবে তিনটি ছেলেমেয়েকে পরিবারসহ থানায় ডেকে আনা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মুঠোফোন পরীক্ষা করে কিছু পাওয়া যায়নি। এর জন্য ফরেনসিক পরীক্ষার প্রয়োজন। আর এটি করতে হলে মামলা লাগবে। কিন্তু ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ‘মানসম্মান হারানোর’ ভয়ে মামলা করতে রাজি নয়। সে ক্ষেত্রে ঘটনাটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা কী হবে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘আমরা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নজরে রাখছি।’

যা ঘটেছে

মেয়ের কথা বলতে গিয়ে কান্না থামাতে পারছিলেন না এক শিক্ষক মা। তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে ও মেয়ের দুই সহপাঠী এবং অন্য একটি স্কুলের একই বয়সী মেয়েকে নিয়ে ভিডিও বানিয়ে টাকা চাওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় তাঁর মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তিনি জানান, ৮ জানুয়ারি বুধবার দুপুরে তিনি মেসেঞ্জারের ভিডিও পান। ভিডিও প্রেরণকারীর আইডির নাম ‘Dil Ru Ba’। একটি বিকাশ নম্বর দিয়ে তাঁকে বুধবার রাতের মধ্যেই ২০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। তিনি ওই নম্বরে কল দিলে দেখেন এটি তাঁরই এক সাবেক ছাত্রের নম্বর। এখন সে কলেজ পড়ে।

এ ধরনের কোনো ঘটনা সে জানে না বলেও দাবি করে। পরে এই শিক্ষক ভিডিও প্রেরণকারী আইডির কাছে টাকা পাঠানো জন্য ব্যাংকের হিসাব নম্বর চান। জবাবে ওই আইডি এক শিক্ষক দম্পতির মেয়ের কাছে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আসতে বলে। এবং ওই মেয়ের কাছ থেকে আরেক ছেলের ফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়।

ভুক্তভোগী মেয়েটির মা বলেন, তাঁর মেয়ের সহপাঠী সন্দেহভাজন। কিন্তু সে পুরো ঘটনা অস্বীকার করেছে। তিনি য়ারও জানান, ৯ জানুয়ারি তিনি ওই আইডির বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। আইডিতে যেসব নম্বরে যোগাযোগ করে টাকা দিতে বলা হয়েছিল, সেই নম্বর ব্যবহারকারী ছেলেমেয়েদের পরিবারসহ থানায় ডাকা হয়।

এই শিক্ষিকা আরও বলেন, সেই আইডি থেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় বলে দাবি করেন । এছাড়া টাকা না দিলে পর্নো ভিডিও করে ছেড়ে দেবে এবং তাঁর মেয়েদের অ্যাসিড নিক্ষেপ করবে বলে হুমকি দেয়। ১২ জানুয়ারি তাঁকে পর্নো ভিডিও পাঠানো হয়। সেখানে তাঁর নিজের ও আরেক মেয়ের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী আরেক মা বলেন, তাঁর মেয়ের ছবি দিয়ে পর্নো ভিডিও করে তাঁর কাছে পাঠানো হয় এবং এক লাখ টাকা না দিলে তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়। 

মামলা করতে ভয়

মামলা করলে বিষয়টি আরও জানাজানি হয়ে যাবে, মানসম্মান নষ্ট হবে, এমন আশঙ্কায় মামলা করতে ভয় পাচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। মামলা না করা প্রসঙ্গে এক মা বলেন, ‘আপনি–আমি বুঝতে পারছি, এটা ভুয়া ভিডিও। কিন্তু সবাই এভাবে বুঝতে চায় না। এই ভিডিও যদি মেয়ের বিয়ের সময় ছড়িয়ে দেয়! আমার মেয়ের তো জীবন শেষ হয়ে যাবে! ’

শিক্ষক মা বললেন, তিনি পুলিশ সদর দপ্তর পরিচালিত পুলিশ সাইবার সাপোর্ট সেন্টার ফর উইমেনের (পিসিএসডব্লিউ) ফেসবুক পেজে বিশদ জানিয়ে অভিযোগ করেছেন। তাঁর কাছে ভিডিও প্রেরণকারী আইডির লিংক চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওই আইডি ডিঅ্যাকটিভেটেড হয়ে আছে।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ অনুসারে ছবি ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও তৈরি করায় মামলাটি হবে। আর ব্ল্যাকমেইল করে টাকা চাওয়ায় মামলায় দণ্ডবিধি ১৮৬০–এর চাঁদাবাজি ধারা যুক্ত হবে। এমন  অপরাধের জন্য অপরাধী সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’

আরও পড়ুন যুবদল নেতা স্লোগান দিয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে মৃত্যু

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *