আগামী ১৮ মাসের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার বিষয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ-জামান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই বক্তব্যকে সমর্থন করার পক্ষে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তবে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কবে, সংস্কার ও সময় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি রোডম্যাপ চায় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে।
দেশের অন্যতম একটি প্রধান দল বিএনপি মনে করে, সরকার আন্তরিক হলে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আগামী ১৮ মাসের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। আর এটি যত দ্রুত করা সম্ভব হবে, ততই দেশ, জনগণ এবং সরকারের জন্যও মঙ্গল হবে। সরকারের কাছ থেকেও নির্বাচনের সময় নিয়ে রোডম্যাপ আশা করে দলটি। সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে সমর্থন করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল বুধবার বলেন, ‘আমরা এ সরকারের সংস্কারকে সমর্থন করছি। কিন্তু আমরা বলে আসছি, এখানে নির্বাচনের বিষয়টা জরুরি এবং অগ্রাধিকার। যদি সরকার আন্তরিক হয়, এ-সংক্রান্ত সংস্কার করে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান ১৮ মাসের মধ্যেই সম্ভব।’ তিনি মন্তব্য করেন, যত দ্রুত সম্ভব জনগণের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন ও ভোটের অধিকার দেওয়া যাবে, সেটা দেশ, জনগণ ও সরকারের জন্যই মঙ্গল হবে।
এ ছাড়া গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে খুব একটা বেশি সময় লাগার কথা নয়। নির্বাচন কমিশনে যতটুকু স্বাধীনতা নিশ্চিত হওয়া দরকার, সেসব প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়।’ তারা মনে করে আগামী ১৮ মাসের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। অন্যদিকে সংস্কার শেষ করে নির্বাচন চায় জাতীয় পার্টি।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এই পটপরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে বিএনপি। পরে সেখান থেকে সরে এসে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক সময়’ দেওয়ার কথা বললেও কার্যত দলটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাইছে। কিছুদিন ধরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর বক্তব্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ শেষ করে নির্বাচন দেওয়ার জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়ে আসছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নিয়ে এখনো কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। তবে গত সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান যেকোনো পরিস্থিতিতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের অঙ্গীকারের কথা জানান। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হতে পারে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে এ সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন। সেনাপ্রধানের এ বক্তব্যে নির্বাচনের সময় নিয়ে একটা ধারণা পাওয়া গেল বলে কোনো কোনো দল মনে করছে।
‘সংস্কার শেষ করেই নির্বাচন’
তবে রুহিন হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠাজাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে তাঁর ব্যক্তিগত বলে মনে করেন। মুজিবুল হক বলেন, রাষ্ট্রের কিছু বিষয়ে সংস্কার শেষ করা প্রয়োজন। সে জন্য সংস্কার শেষ করেই নির্বাচন হলে ভালো হয়। এটিই তাঁদের দলের অবস্থান বলে তিনি জানিয়েছেন।
এখনই সময় বেঁধে দিতে চায় না জামায়াত
আগামী ১৮ মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে এখনই প্রতিক্রিয়া জানাবে না জামায়াতে ইসলামী। এ বিষয়ে ‘একটু সময় নিয়ে’ দলের অবস্থান প্রকাশ করা হবে বলে জানান দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
গতকাল বুধবার মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘উনি (সেনাপ্রধান) একটা বিবেচনা থেকে কথা বলেছেন। আমরা এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চাই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে এক্ষুনি সময়-দিন-ঘণ্টা বেঁধে দেওয়ার সময় আসেনি। আমরা যেটা বরাবরই বলে আসছি, একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কতগুলো সংস্কার দরকার। সেটা হওয়ার পর সবাই বুঝবে যে নির্বাচনের পরিবেশ হয়েছে। সে জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বলেছি। এটা যৌক্তিক সময়, খুব লম্বা হবে না, আবার সংক্ষিপ্তও হবে না।’
রোডম্যাপের অপেক্ষায় বিভিন্ন দল
নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে তাঁর মতামত বলে মনে করেন গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী। তিনি বলেন, নির্বাচন, সময় ও সংস্কার প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো একটি রোডম্যাপের কথা বলে আসছে। তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার একটি রোডম্যাপ তৈরি করবে। সেটি তাঁরা প্রত্যাশা করেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেনও (প্রিন্স) মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকেই একটা রোডম্যাপ দেওয়া উচিত ছিল। নির্বাচন, সংস্কার ও সময়ের ব্যাপারে তাঁরা এখনো সরকারের রোডম্যাপের অপেক্ষায় থাকবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নের বিষয়ে সেনাপ্রধান যে ১৮ মাস সময়ের কথা বলেছেন, এর মাধ্যমে তিনি অন্তত সেনাবাহিনীর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। সে জন্য সেনাপ্রধানকে ধন্যবাদ জানাই।’
2 thoughts on “নির্বাচন কবে, জানতে চায় রাজনৈতিক দলগুলো”