বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের উদ্যোগে দেশে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিতহতে পারে বলে নানা মহলে আলোচনা চলছে। যদিও সমন্বয়কেরা বলছেন, রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে তাঁরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দল গঠনের সিদ্ধান্ত হতে পারে ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী’। তাঁরা আপাতত ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ’ ও একটা ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ জন্য কাজ করছেন।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আকরাম হুসাইনের বক্তব্যে অনেকটাই স্পষ্ট তারা রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে তাদের আগ্রহ রয়েছে, সেটা তিনি গতকাল শনিবার গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন প্রধানতম লক্ষ্য রাষ্ট্রের সংহতি বা রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা। ধ্বংস করে দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন। এরপর ইনশা আল্লাহ অবশ্যই আমরা রাজনীতি করব, রাজনীতির দিকেই এগোব।আরও বলেন, রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি সময়ই বলে দেবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে পরিস্থিতি অনুযায়ী।
গত ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত এক মাসের মাথায় তারা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদেও রয়েছেন তাদের দুজন সমন্বয়ক।
উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই সমন্বয়কের একজন হলেন নাহিদ ইসলাম। তাঁদের রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, এ বিষয়ে গতকাল তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে যে জাতীয় ঐকমত্য ও স্পিরিট তৈরি হয়েছে, সেটিকে আমরা ধরে রাখতে চাই। রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে জনগণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে। সবকিছুর ভিত্তিতে পরিস্থিতিই বলে দেবে আমরা রাজনৈতিক দল গঠন করা হবে কিন। কিন্তু দেশের বর্তমান অবস্থায় আপাতত এ ধরনের কোনো আমাদের পরিকল্পনা নেই।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনে আহতরা এখনো সুস্থ হননি, শহীদদের পরিবারকে আমরা যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিতে পারিনি। এগুলো আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। পরে দেশ গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি রয়েছে।নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনাটি ব্যাপকভাবে সামনে আসে গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনের পর। ওই প্রতিবেদনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মাহফুজ আলমকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, তাঁদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বিবৃতিতে মাহফুজ আলম বলেন, রয়টার্সে তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে এসেছে। তাঁর বক্তব্য ছিল, তাঁরা রাজনৈতিক সংগঠন নিয়ে এখনই ভাবছেন না। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য তাঁরা কাজ করছেন। রাষ্ট্র ও সমাজের সবার সঙ্গে আলোচনা করে আগামীর বাংলাদেশের রূপরেখা নিয়েও কাজ করবেন। এসব কাজ করতে অন্তত এক মাস লাগবে।অবশ্য রাজনৈতিক দলের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে উল্লেখ করেন আকরাম হুসাইন। তিনি বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও রাষ্ট্রের সংহতি আমাদের লক্ষ্য। দ্বিতীয় স্বাধীনতা যেন জনগণ ভোগ করতে পারে এবং সবাই যেন প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে পারে, সে জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার এই স্বাদ যাতে আমরা দীর্ঘ মেয়াদে নিতে পারি, সে জন্যও আমরা চেষ্টা করব।’
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বলতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আসলে কী বোঝাতে চাইছে, তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আকরাম হুসাইন বলেন, রাজনৈতিক বন্দোবস্তের অর্থ হচ্ছে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে ধ্বংস করেছে যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ছাড়া এখন যদি নির্বাচন হয়, জনগণ কোথাও সমান সুযোগ পাবে না। দেখা যাবে প্রশাসন–পুলিশ কোনো একটা পক্ষ নেবে, সেই পক্ষেই সবকিছু চলে যাবে। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের জন্য আমরা অপেক্ষা করব।