গত ২৪ আগস্ট ফ্রান্স থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন পাভেল ভ্যালেরিয়েভিচ দুরভ। পাভেল দুরভ (Pavel Durov) একজন রাশিয়ান উদ্যোক্তা এবং প্রযুক্তি পেশাজীবী, যিনি টেলিগ্রাম (Telegram) মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন এবং ভিকনতাকতে (VKontakte) নামক সামাজিক নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত।
দুরভ ১৯৮৪ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে জন্মগ্রহণ করেন পাভেল দুরভ । তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৬ সালে, দুরভ ভিকনতাকতে প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে রাশিয়ার অন্যতম প্রধান সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট হয়ে ওঠে।
২০১৩ সালে, তিনি ভিকনতাকতে থেকে বেরিয়ে আসেন এবং সেই বছরেই টেলিগ্রাম অ্যাপ্লিকেশনটি চালু করেন। টেলিগ্রাম একটি নিরাপদ মেসেজিং অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে এবং এর গোপনীয়তা ও সুরক্ষা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর জন্য জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পাভেল দুরভ তার ব্যবসায়িক দর্শন এবং ব্যক্তিগত জীবনের জন্যও আলোচিত হয়েছেন। তিনি প্রায়ই গোপনীয়তা এবং স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলেন এবং তার কোম্পানিগুলোর মধ্যে এই মানগুলোর প্রতিফলন ঘটে।
সম্প্রতি দুরভ আটকের পর মূলত বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠে। টেলিগ্রামের কারিগরি ও প্রশাসনিক দুর্বলার কারণে সংবদ্ধ গোষ্ঠীর অবৈধ লেনদেন পরিচালিত হয়। এছাড়া ফরাসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগীতা না করা এবং টেলিগ্রামের মাধ্যমে শিশুদের যৌনসঙ্গক্রান্ত ছবি বিতরণের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ৩৯ বছর বয়সীর রয়েছে অনেক গুলো ব্যক্তিত্ব ও চমকপ্রদ কিছু বিষয়। যেমন-
চারটি দেশের নাগরিকত্ব আছে পাভেলের
১৯৮৪ সালের ১০ অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়নের লেলিনগ্রাদে জন্ম পাভেলের। জন্ম সোভিয়েত ইউনিয়নে হলেও বেড়ে উঠেছেন ইতালিতে। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। পাভেলের জন্মস্থানের নাম লেলিনগ্রাদ থেকে হয়ে যায় সেন্ট পিটার্সবার্গ, দেশ হয়ে যায় রাশিয়া। ইতালি ছেড়ে রাশিয়ায় এসে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সটির ভাষাবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন পাভেল। ফেসবুকের আদলে রাশিয়ায় চালু করেন ‘ভিকন্তাক্তে’ নামের একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। রাশিয়া ছাড়াও ক্যারিবীয় দ্বীপরাষ্ট্র সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সর্বশেষ ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পান পাভেল। সে হিসেবে মোট চারটি দেশের নাগরিকত্ব আছে তাঁর। এছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধরলে অবশ্য সংখ্যাটা পাঁচ!
নিজেকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ছোটবেলায়
রুশ স্কুলগুলোর একটা ঐতিহ্য হলো, স্কুলজীবন শেষ করার সময় শিক্ষকদের বাড়িতে গিয়ে বিদায় নিতে হয়। সেই সঙ্গে ক্যামেরার সামনে নিজেকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করারও নিয়ম আছে। পাভেলের স্কুলশিক্ষক জর্জি মেদনিকভের দেওয়া তথ্যমতে , পাভেল সেদিনই নিজেকে ভবিষ্যতের ইন্টারনেট বিশ্বের ‘একজন ইতিহাস’’ হয়ে উঠবেন বলে আশা করেছিলেন।
বিলাসী জীবন পছন্দ পাভেলের
অন্য বিলিয়নিয়ারদের মতো পাভেলও যথেষ্ট বিলাসী জীবন যাপন করেন। বিলাসী জীবন যাপন করতে গিয়ে একাধিকবার খবরের শিরোনামও হতে হয়েছে তাঁকে। ২০১৬ সালে তাঁকে দামি ও বিলাসবহুল প্রমোদতরি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লার্সেনের একটি প্রমোদতরিতে সময় কাটাতে দেখা যায়। নিজেই টুইটারে তা শেয়ার করেছিলেন। ইয়টওয়ার্ল্ডের তথ্যমতে, লার্সেন নির্মিত একটি প্রমোদতরিতে থাকতে হলে আপনাকে গুনতে হবে কমপক্ষে ১০ লাখ মার্কিন ডলার!
পাভেল কিন্তু বিবাহিত
রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় পাভেলের সঙ্গে পরিচয় হয় দারিয়া বন্দারেনকোর। ক্যাম্পাসে তুমুল জনপ্রিয় মেধাবী পাভেলের সাক্ষাৎকার নিতে আসেন দারিয়া। দারিয়া তখন ‘স্টুডেন’ নামের একটি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুজনের মন নেওয়া-দেওয়ার পর প্রণয়, তারপর বিয়ে। পরে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও পাভেল-দারিয়া দম্পত্তির দুই সন্তান আছে।
১০০ সন্তানের বাবা
বিবাহিত জীবনে পাভেল-দারিয়া দম্পত্তির দুটি সন্তান থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে পাভেল স্পার্ম ডোনেট করে চলেছেন। একটি টেলিগ্রাম পোস্টে পাভেল জানান, এভাবে প্রায় ১০০ সন্তানের ‘বায়োলজিক্যাল’ বাবা হয়েছেন তিনি।
৩০ জনেই চলছে টেলিগ্রাম
হ্যাঁ,আপনি যা শুনছেন, তা অনেকটাই সত্য। এক্সে (সাবেক টুইটার) সম্প্রতি পাভেলের এক ভিডিও সাক্ষাৎকার ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, মাত্র ৩০ জন প্রকৌশলী নিয়ে টেলিগ্রাম চালাচ্ছেন। এমনকি তাঁর প্রতিষ্ঠানে নেই কোনো মানবসম্পদ ব্যবস্থাপক। এ তথ্য ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা নানা রকম মন্তব্য করছেন। মাত্র ৩০ জন কর্মী নিয়ে দুবাইয়ে বসে এত বড় প্রতিষ্ঠান চালানোয় টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। তবে টেকক্রাঞ্চকে টেলিগ্রামের মুখপাত্র বলেছেন, ৩০ জন প্রকৌশলী ছাড়াও আরও ৩০ জন কর্মী টেলিগ্রামের ‘কোর টিমে’ কাজ করেন।
ফোর্বসের তালিকায় পাভেল
জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের বিলিয়নিয়ারদের তালিকায় ১২২তম স্থানে উঠে আসেন রাশিয়ার ‘মার্ক জাকারবার্গ’খ্যাত পাভেল দুরভ। দুরভের মোট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫৫০ কোটি ডলার। এই সম্পদের বেশির ভাগই আসে টেলিগ্রাম থেকে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ কোটি ব্যাবহারকারী আছে এই বার্তা আদান-প্রদান মাধ্যমটির।