মিস বাংলাদেশ বিউটি পেজেন্টের ২০২৪ সংস্করণে, ফেরদৌসী তানভীর ইচ্ছা বিজয়ী হিসাবে আবির্ভূত হন, মিস বাংলাদেশ আর্থ খেতাব অর্জন করেন। তিনি ২০২৪ সালের নভেম্বরে ফিলিপাইনে মর্যাদাপূর্ণ মিস আর্থ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির আইনের ছাত্রী ইচ্ছা, তার মা, একক অভিভাবক এবং একজন শিক্ষক দ্বারা বেড়ে উঠেছেন।
মিস বাংলাদেশ
একটি জাতীয় সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা, যা বাংলাদেশি নারীদের সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা, এবং প্রতিভাকে তুলে ধরে। এই প্রতিযোগিতা দেশের নারীদের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়, যেখানে তারা বাংলাদেশকে বিভিন্ন গ্লোবাল মঞ্চে উপস্থাপন করেন।
প্রতিযোগিতাটি মূলত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারীদের বেছে নেয়ার একটি মাধ্যম। উদাহরণস্বরূপ, মিস বাংলাদেশ খেতাব অর্জনকারী নারীকে মিস ওয়ার্ল্ড, মিস ইউনিভার্স, মিস আর্থ ইত্যাদি প্রতিযোগিতায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য প্রস্তুত করা হয়।
মিস বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নারীরা সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গেও যুক্ত হন, যা তাদেরকে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার সুযোগ করে দেয়
মিস বাংলাদেশ বিজয়ী-২০২৪
ফেরদৌসি তানভীর যার ডাকনাম ইচ্ছা। ইচ্ছা ‘মিস বাংলাদেশ বিউটি পেজেন্ট ২০২৪’ শিরোপা অর্জন করেছেন। ‘মিস বাংলাদেশ আর্থ’-এর শিরোপাও জিতেছেন তিনি। ফিলিপাইনে আগামী ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় ‘মিস আর্থ প্রতিযোগিতা’য় বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি। এক মাস আগে প্রতিযোগিতাটির খোঁজ পেয়েছিলেন ইচ্ছা। মায়ের আগ্রহেই তিনি অংশ নেন। নাওয়াখাওয়া ভুলে মাত্র তিন দিনের প্রস্তুতিতেই পেয়ে গেছেন ‘মিস বাংলাদেশ বিউটি পেজেন্ট’ খেতাব। ৪ অক্টোবর ঢাকার লা মেরিডিয়ানে প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়।
সৃজনশীলতা, প্রতিভা, বুদ্ধিমত্তা ও সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দিয়ে গ্র্যান্ড ফিনালের জন্য ১০ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। বিশ্বের ৬টি মহাদেশের ১০টি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন নির্বাচিত নারীরা।
ইচ্ছা জন্মেছেন ঢাকার মিরপুরে। বলছিলেন, ‘আমার বেড়ে ওঠাও ঢাকাতেই। আমার মা শাওলী ফেরদৌসি একজন শিক্ষক। তাঁর হাত ধরেই আমার সামনে এগিয়ে চলা। মা একা আমাকে বড় করেছেন। তাঁরই অনুপ্রেরণায় এক মাস আগে প্রতিযোগিতায় নাম লেখাই। বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি পড়ছি।’
মিস বাংলাদেশে প্রথমবার অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েই বেশ খুশি এই তরুণী। তিনি জানান, ‘কল্পনাতেও ছিল না আমি শীর্ষ ১০-এ থাকব। নতুন করে অনেক কিছু শিখেছি এই প্রতিযোগীতায় এসে । আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ন সাহস জুগিয়েছে মেন্টররা। কীভাবে নিজেকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে হয়, তা জেনেছি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করতে চাই।’
অভিনয় ও মডেলিংয়ে আগ্রহের কথাও বললেন তিনি। এরই মধ্যে বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ও তথ্যচিত্রে কাজ করেছেন তিনি। জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র একটি অংশেও অভিনয়ের সুযোগ হয়েছিল তার। ইচ্ছা বলছিলেন, ‘মডেলিং ও অভিনয় নিয়মিত করতে চাই। টেলিভিশন থেকে শুরু করে সিনেমা, ডকুমেন্টারি, সব ধরনের মাধ্যমে কাজ করতে চাই। কাজ শেখার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আইনপেশায়ও যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা আছে। ক্রিমিনাল ল নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করতে আমি আগ্রহী।’
অন্য বিজয়ীরা
প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হন কাজী তারানা। তারানা ক্যাম্বোডিয়ায় মিস গ্লোবালে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। দ্বিতীয় রানারআপ মাহবুবা রহমান লাবণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রয়েল ইন্টারন্যাশনাল মিসে অংশ নেবেন।
আয়োজক ও বিচারক
‘মিস বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন’ ও ‘মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে। আয়োজনের শুরুতেই লরাটো ফ্যাশন ব্র্যান্ডের প্রধান ডিজাইনার রোজা আফরোজার নকশা করা পোশাকে মঞ্চে হাজির হন প্রতিযোগীরা। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। অংশগ্রহণকারীরা বলেন, তাঁদের স্বপ্ন আর নতুন পৃথিবী তৈরির প্রত্যয়ের কথা। নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে পৃথিবী বদলে দেওয়ার উৎসাহই পাওয়া গেল অধিকাংশের কথায়।
গ্রোইং টুগেদারের পরিচালক জুলিয়া ওয়েসম্যান, আন্তর্জাতিক স্টাইলিস্ট ও যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক মিননা স্ফিনহুউ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শারমিন রহমান, সংগীত প্রযোজক ও সুরকার মানাম আহমেদ, নর্থব্রুক কনসালটেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজিম ফারহান চৌধুরী, করপোরেট ট্রেইনার ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ফেরদৌস বাপ্পী এবং মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম গ্র্যান্ড ফিনালেতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
শীর্ষ ১০ প্রতিযোগীর অন্য ৭ জন বাংলাদেশকে মিস হেরিটেজ ইন্টারন্যাশনাল (থাইল্যান্ড), মিস এশিয়া, মিস এশিয়া গ্লোবাল, মিস গ্ল্যাম ওয়ার্ল্ড (ভারত), মিস ইন্টারগ্লোবাল (ফিলিপাইন), মিস কালচার গ্লোবাল (দক্ষিণ আফ্রিকা) ও মিস ফ্রিডম অব দ্য ওয়ার্ল্ড (কসোভো ও আলবেনিয়া) প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করবেন।
মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম বলেন, বাংলাদেশকে পুনর্গঠন ও পুনরায় আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিং করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পরিবর্তনের দূত হিসেবে পরিবেশ রক্ষা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার গুরুত্বকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরবেন এই নারীরা বলে প্রত্যাশা। যারা আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণ করবেন বাংলাদেশী নারীরাও বিশ্বের অন্য নারীদের মতোই যোগ্য।
আরও পড়ুন বিটিভির অতীত ও বর্তমান অনুষ্ঠান কেমন