ক্রিকেট খেলার আন্তর্জাতিক নিয়মাবলী বিভিন্ন গঠনতন্ত্র ও নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই নিয়মগুলো মূলত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) দ্বারা প্রণীত এবং পরিচালিত হয়। নিচে ক্রিকেট খেলার কয়েকটি প্রধান আন্তর্জাতিক নিয়মাবলী উল্লেখ করা হলো:
1. **খেলার ফর্ম্যাট**:
– **টেস্ট ক্রিকেট**: পাঁচ দিনের খেলা, প্রতিটি দলে দুই ইনিংস।
– **ওয়ানডে ক্রিকেট (ODI)**: ৫০ ওভারের খেলা, প্রতিটি দলে এক ইনিংস।
– **টি-টোয়েন্টি (T20)**: ২০ ওভারের খেলা, প্রতিটি দলে এক ইনিংস।
2. **দল এবং খেলোয়াড়**:
– একটি দলে ১১ জন খেলোয়াড় থাকে।
– প্রতিটি দল একজন অধিনায়ক এবং একজন উইকেটকিপার থাকতে হবে।
3. **পিচ এবং মাঠ**:
– পিচের দৈর্ঘ্য ২২ গজ (২০.১২ মিটার)।
– পিচের প্রস্থ ১০ ফুট (৩.০৫ মিটার)।
– বাউন্ডারি সাধারণত ৬০ থেকে ৯০ মিটার মধ্যে থাকে।
4. **ব্যাটিং ও বোলিং**:
– বোলার প্রতিটি ওভারে ৬টি বৈধ বল করেন।
– ব্যাটসম্যান বলকে স্ট্রাইক করার চেষ্টা করেন এবং রান করেন।
5. **আউট হওয়ার নিয়ম**:
– **বোল্ড**: যখন বল স্টাম্পে আঘাত করে।
– **ক্যাচ আউট**: যখন ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক করা বল ফিল্ডার হাতে ক্যাচ ধরে।
– **লেগ বিফোর উইকেট (LBW)**: যখন বল ব্যাটসম্যানের প্যাডে আঘাত করে এবং যদি বল স্টাম্পে আঘাত করত।
– **রান আউট**: যখন ব্যাটসম্যান রান নেয়ার সময় স্টাম্পে আঘাত করা হয়।
– **স্টাম্পড**: যখন ব্যাটসম্যান স্ট্রাইক করতে গিয়ে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে যায় এবং উইকেটকিপার স্টাম্পে আঘাত করেন।
6. **স্কোরিং**:
– একটি রান হলে ব্যাটসম্যান দুই প্রান্ত পরিবর্তন করেন।
– চার রান হলে বল বাউন্ডারির ভিতরে চলে যায়।
– ছয় রান হলে বল বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়।
7. **নো বল এবং ওয়াইড বল**:
– **নো বল**: বোলার যখন বৈধভাবে বল করতে ব্যর্থ হন।
– **ওয়াইড বল**: বল যখন ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইকিং রেঞ্জের বাইরে চলে যায়।
8. **ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতা**:
– নির্দিষ্ট ওভারগুলোতে ৩০ গজের মধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক ফিল্ডার থাকতে হবে।
– পাওয়ারপ্লে এর সময় বিশেষ ফিল্ডিং নিয়ম প্রযোজ্য।
এই নিয়মগুলি প্রতিটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রযোজ্য হয় এবং খেলার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য মানা হয়। এছাড়াও, প্রতিটি ফরম্যাটের খেলার জন্য নির্দিষ্ট কিছু অতিরিক্ত নিয়মাবলী থাকতে পারে।
9. **ডিআরএস (ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম)**:
– **ডিআরএস** ব্যবহার করা হয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের রিভিউ নিতে। প্রতিটি দল নির্দিষ্ট সংখ্যক রিভিউ ব্যবহার করতে পারে।
– ব্যাটিং দল বা ফিল্ডিং দল আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করতে পারে।
– টিভি আম্পায়ার আল্ট্রা এজ, হক আই, এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেন।
10. **স্লো ওভার রেট**:
– নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিটি দলকে নির্দিষ্ট সংখ্যক ওভার করতে হয়।
– স্লো ওভার রেটের জন্য দলের উপর জরিমানা আরোপ করা হতে পারে এবং অধিনায়কের উপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
11. **কনকাশন সাবস্টিটিউট**:
– যদি কোনো খেলোয়াড় মাথায় আঘাত পায় এবং খেলা চালিয়ে যেতে অক্ষম হয়, তবে তার পরিবর্তে অন্য খেলোয়াড়কে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়।
12. **কোড অব কন্ডাক্ট**:
– খেলোয়াড়দের জন্য নির্দিষ্ট আচরণবিধি থাকে যা মেনে চলতে হয়।
– খারাপ আচরণের জন্য খেলোয়াড়দের উপর শাস্তি আরোপ করা হয়, যেমন জরিমানা, নিষেধাজ্ঞা, বা ম্যাচ ফি কর্তন।
13. **প্রতিযোগিতার ফরম্যাট**:
– আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলো বিভিন্ন ফরম্যাটে আয়োজিত হয়, যেমন লিগ স্টেজ, নকআউট স্টেজ ইত্যাদি।
– বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ইত্যাদি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন দল।
14. **আবহাওয়া ও মাঠ পরিস্থিতি**:
– খেলার সময় আবহাওয়ার কারণে খেলা বন্ধ হলে, ডি/এল মেথড (ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি) ব্যবহার করা হয় স্কোর নির্ধারণে।
– মাঠের কন্ডিশনের কারণে খেলা বন্ধ হলে রিজার্ভ ডে ব্যবহার করা হয়।
15. **অ্যাঙ্কল ক্ল্যাম্পিং এবং বোলিং অ্যাকশন**:
– বোলিং অ্যাকশন অবৈধ হলে বোলারকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।
– অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য সংশোধনী প্রয়োজন।
ক্রিকেট খেলার এই নিয়মগুলো খেলার সুষ্ঠু পরিচালনা ও প্রতিযোগিতার সমতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) নিয়মিত এই নিয়মাবলী পর্যালোচনা করে এবং প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন আনে।
1 thought on “ক্রিকেট খেলার আন্তর্জাতিক নিয়মসমুহ”