বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে ভারতের

বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে ভারতের ৯ বিশ্ব রেকর্ড

খেলাধুলা
Spread the love

ভারতের কানপুরে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের ২৩৩ রানের জবাবে ভারতের রান আজ মাত্র ৩ ওভারে ৫০ ছাড়িয়েছে, যা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্রুততম। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা বাংলাদেশের বিপক্ষে কানপুরে যা শুরু করেছিলেন ,টিভিতে  দেখে মনে হচ্ছিল সরাসরি কোনো টেস্ট ম্যাচ নয়,  টি-টেন ম্যাচের হাইলাইটস চলছে! দলের রান ১০০ ছাড়াতে ভারতের লেগেছে ১০.১ ওভার, সেটাও ছিল টেস্ট ইতিহাসের দ্রুততম দলীয় ১০০ রান। এরপর গড়েছে দ্রুততম দলীয় ১৫০, ২০০, ২৫০ রানের রেকর্ডও। মাত্র ৩৪.৪ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮৫ রান করেছে রোহিত শর্মার দল। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বেশি রান রেটের দলীয় ইনিংস।

শুরুর দিকে বেধড়ক পিটুনি খাওয়ার পর অবশ্য বাংলাদেশের বোলাররা ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েছিলেন। সাকিব-মিরাজ-হাসানরা অল্প সময়ের মধ্যে তুলে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। তবে পঞ্চম উইকেটে জুটি বেঁধে বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল আবারও মারমুখী ব্যাটিং করে গেছেন। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮৫ রান তুলে বাংলাদেশের চেয়ে ৫২ রানে এগিয়ে থেকে প্রথম ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে ভারত। 

তবে কানপুর টেস্টের চতুর্থ দিনে আজ বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনীতে এরই মধ্যে নয়টি বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ফেলেছে স্বাগতিকেরা। বিশ্ব রেকর্ডের শুরুটা হয়েছে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার সৌজন্যে। পরের ৮টি হয়েছে দলীয়ভাবে।

ইনিংসে নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম দুই বলেই ছক্কা মেরেছেন রোহিত। টেস্ট ইতিহাসে এমন ঘটনা এ নিয়ে চতুর্থবার। তবে রোহিতই একমাত্র ওপেনার, যিনি মুখোমুখি হওয়া প্রথম দুই বলেই ছক্কা মেরেছেন। নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম দুই বলে পেসারকে ছক্কা মারা প্রথম ব্যাটসম্যানও রোহিত। ৬ মাস পর টেস্ট খেলতে নামা খালেদ আহমেদের প্রথম বলটি লং অনের ওপর দিয়ে ওড়ান ‘হিটম্যান’, পরের ছক্কাটি মারেন ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে।

টেস্টে মুখোমুখি হওয়া প্রথম ২বলেই ছক্কা

এই কীর্তি গড়া অন্য তিনজন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফোফি উইলিয়ামস এবং ভারতের শচীন টেন্ডুলকার ও উমেশ যাদব। চারবারই ব্যাটসম্যানরা ছিলেন স্বাগতিক দলের। তবে তিনটি ঘটনা এই শতাব্দীর—কানপুরে আজ রোহিতের আগে ২০১৯ সালে রাঁচি টেস্টে উমেশ যাদব প্রথম দুই বলেই ছক্কা মেরেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জর্জ লিন্ডার ওভারে। ২০১৩ সালে চেন্নাই টেস্টে টেন্ডুলকার মেরেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নাথান লায়নের বলে।

অন্যদিকে,ইংল্যান্ডের জিম লেকারের বলে ১৯৪৮ সালে ব্রিজটাউন টেস্টে ফোফি উইলিয়ামস এই কীর্তি গড়েন। এই লেকার, যিনি টেস্ট ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে ৪ বছর পর এক ইনিংসে ১০ উইকেটই নিয়েছিলেন। উইলিয়ামস-লেকার দুজনই অনেক আগেই ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন।  

ভারতের পরের আটটি বিশ্ব রেকর্ড অদূর ভবিষ্যতে কোনো দল ভাঙতে পারবে বলে মনে হয় না। ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম দলীয় ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০—সব রেকর্ড এখন ভারতের দখলে।

এ ছাড়া টেস্টে যেকোনো উইকেটে ৫০ ছাড়ানো দ্রুততম জুটি, এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ ছক্কা ও পূর্ণাঙ্গ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান রেট—এই রেকর্ডগুলোতে এখন সবার ওপরে ভারতের নাম।

ভারতের ইনিংসে ওভারপ্রতি রান। টেস্ট ইতিহাসে পূর্ণাঙ্গ ইনিংসে যা সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ডও ভারতের—৭.৫৪, ২০২৩ সালে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৪ ওভারেই ১৮১ রান করেছিল ভারত।

যেকোনো উইকেটে ৫০ ছাড়ানো জুটিতে রোহিত রোহিত-জয়সোয়ালেরটাই এখন দ্রুততম। উদ্বোধনী জুটিতে আজ দুজন মিলে করেন ২৩ বলে ৫৫ রান; রান রেট ১৪.৩৪!

রোহিত-জয়সোয়াল আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে যে রেকর্ডটা ভেঙেছেন, তা মাত্র ২ মাস আগেই হয়েছিল। গত জুলাইয়ে এজবাস্টন টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ১০ উইকেটের জয়ের দিনে অধিনায়ক বেন স্টোকস বেন ডাকেটকে নিয়ে ওপেনিংয়ে নেমে গড়েছিলেন ৪৪ বলে ৮৭ রানে অবিচ্ছিন্ন জুটি, রান রেট ছিল ১১.৮৬।

টেস্টে এক পঞ্জিকা বর্ষে সর্বোচ্চ ছক্কা

নিজেদের ইনিংসে আজ ১১টি ছক্কা মেরেছে ভারত। এর মধ্যে ইনিংসের দশম ওভারের মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লং অফের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে ভারতকে আরেকটি বিশ্ব রেকর্ড গড়তে সহায়তা করেছেন জয়সোয়াল।  সেটি ছিল ৯০তম ছক্কা এ বছর টেস্টে ভারতের, যা এক পঞ্জিকা বর্ষে বিশ্বের যেকোনো দলের সর্বোচ্চ ছক্কা। এর আগের সর্বোচ্চ ছক্কা ছিল ইংল্যান্ডের, ২০২২ সালে ৮৯টি।

কানপুর টেস্টে যতগুলো রেকর্ড গড়ল ভারতীয়রা

কানপুর টেস্টের চতুর্থ দিনে বাংলাদেশের বোলারদের উপর তাণ্ডব চালায় ভারতের ব্যাটাররা। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে বেশ কয়েকটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা।

বিশ্ব রেকর্ডের শুরুটা হয় ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মার ব্যাটিংয়ে। পরের গুলো দলীয় রেকর্ড। এ ছাড়া বিরাট কোহলিও গড়েছেন এক রেকর্ড। মুখোমুখি হওয়া প্রথম দুই বলে ছক্কা হাঁকান রোহিত। টেস্ট ইতিহাসে এটি চতুর্থ ঘটনা। চার দলের তিনজনই ভারতীয়। তবে ওপেনার হিসেবে এই কীর্তি গড়া প্রথম ক্রিকেটার রোহিত।

এর আগে সর্বপ্রথম ১৯৪৮ সালে ওপেনার হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফোফি উইলিয়ামস। এরপর ২০১৩ সালে ভারতের শচিন টেন্ডুলকার চেন্নাইয়ে, ভারতের উমেশ যাদব এই কীর্তি গড়েন রাঁচিতে।

১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম দলীয় ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০—সব রেকর্ড গড়েছে ভারত। শুধু তাই নয়, টেস্টে যেকোনো উইকেটে দ্রুততম ৫০ ছাড়ানো জুটি, এক বছরে সর্বোচ্চ ছক্কা ও পুরো ইনিংসে সর্বোচ্চ রান রেট—এ রেকর্ডগুলো রেকর্ড এখন ভারতের দখলে। এখন সবার ওপরে ভারতের নাম।

ওভারপ্রতি ৮.২২ গড়ে রান তুলেছে ভারত। টেস্ট ইতিহাসে পুরো ইনিংসে এটি সর্বোচ্চ। এরপর আগের রেকর্ডটিও ছিল ভারতের। ২০২৩ সালে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৪ ওভারে ভারত করেছিল ১৮১ রান। ওভারপ্রতি রান রেট ছিল ৭.৫৪।

যে কোনো উইকেটে দ্রুততম ৫০ ছাড়ানো জুটির রেকর্ড রোহিত ও জয়সোয়ালের। উদ্বোধনী জুটিতে ২৩ বলে ৫৫ রান করেন দুজন। রান রেট ১৪.৩৪! চলতি বছর জুলাইয়ে এজবাস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০ উইকেটে জয় পায় ইংল্যান্ড। সে দিন ৪৪ বলে ৮৭ রানে অবিচ্ছিন্ন থাকেন অধিনায়ক বেন স্টোকস ও বেন ডাকেট। রান রেট ছিল ১১.৮৬।

বিরাট কোহলির ব্যক্তিগত কীর্তি

ব্যক্তিগত রেকর্ডে বিরাট কোহলি পেছনে ফেলেছেন ভারতীয় কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারকে। দ্রুততম ব্যাটার হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৭ হাজার রান করেন কোহলি। একই সঙ্গে বিশ্বের চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে ২৭ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি।

২৭ হাজার রান করতে শচিনকে খেলতে হয় ৬২৩ ইনিংস। অন্যদিকে তার চেয়ে ২৯ ইনিংস কম খেলে এই নজির গড়লেন কোহলি। কোহলির এ অর্জনে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব জয় শাহ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লিখেন, ‘কোহলির বর্ণময় ক্রিকেটজীবনে আরও একটা মাইলফলক। ২৭ হাজার আন্তর্জাতিক রান করে ফেলল! তোমার ধারাবাহিকতা এবং সফল হওয়ার খিদে গোটা বিশ্বের কাছে অনুপ্রেরণা। অভিনন্দন  তোমায় বিরাট কোহলি, লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করার জন্য।’

কানপুরে রান তাড়ার নতুন রেকর্ড

কানপুর টেস্টটা জিততে রান তাড়ায় নতুন রেকর্ড গড়ছে রোহিত শর্মার ভারত।

গ্রিন পার্কে এর আগে আগে চতুর্থ ইনিংসে ৮২ রানের বেশি করে যে জিততে পারেনি কোনো দল। বাংলাদেশ তো ভারতকে দিয়েছে ৯৫ রানের লক্ষ্য। আগের রেকর্ডের চেয়েও যে রানটা ১৩ বেশি।

গ্রিন পার্কে টেস্টে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটা স্বাগতিক ভারতেরই। ১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ৮২ রানের লক্ষ্য ১৮.২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়েই পেরিয়ে গিয়েছিল শচীন টেন্ডুলকারের ভারত।

আরও পড়ুন সাকিব আল হাসান দেশে ফিরলে কী হবে

1 thought on “বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে ভারতের ৯ বিশ্ব রেকর্ড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *