হান কাং: আমি বেশ অবাক ও সম্মানিত

হান কাং: আমি বেশ অবাক ও সম্মানিত বোধ করছি 

আন্তর্জাতিক
Spread the love

হান কাং একজন দক্ষিণ কোরিয়ান লেখক, যিনি তার সাহিত্যিক কর্মের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। তিনি ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং মূলত কবিতা দিয়ে তাঁর সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন, কিন্তু উপন্যাস ও ছোটগল্পে পরবর্তীতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ হলো “The Vegetarian” (베지테리언), যা ২০১৬ সালে ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ জয় করে। এই উপন্যাসটি মানুষের শরীর, মন, এবং সমাজের বিভিন্ন চাপ ও সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে একটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা।

সাহিত্যে নোবেল-২০২৪ পাওয়ার অনুভূতি

২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং। বৃহস্পতিবার রাতে  দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে নিজের বাসায় খাবার শেষ করার পরপরই তিনি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার খবরটি জানতে পেরেছিলেন। পরে নোবেল পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলা হয়। নোবেল পাওয়ার পাওয়ার এটাই তাঁর প্রথম সাক্ষাৎকার।

টেলিফোনে দেওয়া এ সাক্ষাৎকারে তিনি কোরিয়ার প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পাওয়ার অনুভূতি নিয়ে কথা বলেছেন। হান কাংয়ের মতে, কোনো একক লেখক নয়, বরং তাঁর মধ্যে রয়েছে অনেক লেখকের সম্মিলিত প্রভাব।

সাক্ষাৎকারে হান কাং আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত নিজের উপন্যাস ‘দ্য ভেজেটারিয়ান’ লেখার প্রক্রিয়া নিয়েও কথা বলেছেন। কৌতূহলী পাঠকদের প্রতি হানের সুপারিশ, তাঁরা যেন তাঁর সর্বশেষ উপন্যাস ‘উই ডোন্ট নট পার্ট’ দিয়ে শুরু করেন। এতে করে নতুন পাঠকেরা তাঁর সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা পাবেন বলে বিশ্বাস করেন ৫৩ বছর বয়সী দক্ষিণ কোরিয়ার এই লেখক।

নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে হানের সাক্ষাৎকারটির অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। নোবেল পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন জেনি রাইডেন।

হান কাং : হ্যালো?

জেনি রাইডেন : হ্যালো, আপনি কি হান কাং?

হান কাং : হ্যাঁ।

জেনি রাইডেন : নোবেল পুরস্কার কমিটির পক্ষ থেকে আমি আপনাকে ফোন করেছি। আমার নাম জেনি রাইডেন। 

হান কাং : হুম, আপনার সঙ্গে কথা বলতে বেশ ভালো লাগছে।

জেনি রাইডেন : আপনার সঙ্গে কথা বলতে আমার বেশ ভালো লাগছে। অনুগ্রহ করে সবকিছুর আগে আপনি আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন।

হান কাং : ধন্যবাদ। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

জেনি রাইডেন : এই মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কী?

হান কাং : আমি বেশ অবাক হয়েছি। বেশ সম্মানিত বোধ করছি।

জেনি রাইডেন : আপনি পুরস্কারের খবরটি কীভাবে জানলেন?

হান কাং : আমাকে খবরটি দিয়েছিলেন কেউ একজন ফোনের মাধ্যমে। আমাকে বেশ অবাক করেছিল। ছেলের সঙ্গে সন্ধ্যা (রাত) আটটার সময় রাতের খাবার খাওয়ার পরপরই আমি ফোন পাই। আমার জন্য  অবশ্যই এটা একটি বেশ শান্তিময় সন্ধ্যা ছিল। আমি সত্যিই বেশ অবাক হয়েছিলাম।

জেনি রাইডেন : আপনি কি এখন আপনার বাসায় আছেন?

হান কাং : হ্যাঁ। আমি সিউলে নিজের বাসায় আছি।

জেনি রাইডেন : আজ সারাটা দিনে কী কী করলেন?

হান কাং : আজকে? আজ আমি কোনো কাজ করিনি। টুকটাক পড়েছি। হাঁটতে বের হয়েছিলাম। বলতে গেলে একটা সাদামাটা দিন কাটিয়েছি।

জেনি রাইডেন : আপনি বললেন আপনি আপনার ছেলের সঙ্গে আছেন। আপনার নোবেল পাওয়া নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়াটি কেমন ছিল?

হান কাং : আমার ছেলেও বেশ অবাক হয়েছিল। কিন্তু আমরা এটা নিয়ে কথা বলার বেশি একটা সময় পাইনি। (কারণ) আমরা দুজনেই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আর (ওই মুহূর্তে) ওটাই ছিল সবকিছু।

জেনি রাইডেন :সাহিত্যে নোবেল পাওয়াটা  আপনার কাছে কী অর্থ বহন করে?

হান কাং : আচ্ছা, আমি বেশ সম্মানিত বোধ করছি। আমি আপনার সমর্থন ও এই পুরস্কারের সমর্থনের আন্তরিক প্রশংসা করছি।

জেনি রাইডেন : আপনিই প্রথম সাহিত্যে নোবেল পেলেন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে । এই অনুভূতিটি কেমন লাগছে?

হান কাং :  আপনি জানেন আমি বই পড়তে পড়তে বেড়ে উঠেছি। শৈশব থেকেই আমার বই পড়ার অভ্যাস। কোরীয় ভাষা ও অনুবাদ- উভয় ধরনের বই পড়তে পড়তেই আমি বড় হয়েছি। তাই আমি বলতে চাই, কোরিয়ার সাহিত্যকে সঙ্গী করেই আমি বেড়ে উঠেছি। কোরিয়ার সাহিত্যের সঙ্গে আমি বেশ ঘনিষ্ঠতা বোধ করি। তাই (আমার পুরস্কার পাওয়া) এটি কোরীয় সাহিত্যের পাঠক, আমার বন্ধু ও লেখকদের জন্য একটি চমৎকার খবর বলে আমার মনে হচ্ছে।

জেনি রাইডেন : আপনার সাহিত্য প্রেরণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস কোন কোন লেখকেরা ?

হান কাং : শৈশব থেকেই আমার কাছে লেখকদের ব্যাপারে একটি সামষ্টিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তাঁরা জীবনের অর্থ অনুসন্ধান করেছেন। কখনো কখনো তাঁরা হার মেনেছেন। কখনো কখনো তাঁরা অবিচল থেকেছেন। তাঁদের যাবতীয় প্রচেষ্টা ও শক্তি আমার প্রেরণা। তাই প্রেরণা হিসেবে কয়েকজনের নাম বলাটা আমার জন্য বেশ কঠিন। এটা আমার জন্য আসলেই দারুণ কঠিন।

জেনি রাইডেন : আমি কোথাও পড়েছিলাম সুইডেনের লেখক অ্যাস্ট্রিড লিন্ডগ্রেন আপনার অন্যতম প্রেরণার উৎস?

হান কাং : হ্যাঁ। শৈশবে আমার তাঁর ‘লায়নহার্ট ব্রাদার্স’ পড়তে ভালো লেগেছিল। বইটি আমাকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু এর অর্থ এই না যে, তিনিই একমাত্র লেখক যিনি আমাকে শৈশবে প্রেরণা জুগিয়েছিলেন।

জেনি রাইডেন : যারা মাত্র আপনার কাজ সম্পর্কে জেনেছেন, তাঁদের জন্য আপনার কোন পরামর্শ আছে কী? তাঁরা আপনার কোন বই দিয়ে শুরু করলে ভালো হয়?

হান কাং : আমার বইয়ের কথা বলছেন? আমি মনে করি প্রত্যেক লেখক তাঁর সর্বশেষ বইকে বেশি পছন্দ করেন। নতুন পাঠকেরা চাইলে আমার সর্বশেষ বই ‘উই ডু নট পার্ট’ দিয়ে শুরু করতে পারেন। ইংরেজি অনুবাদে বইটার আরও দুটি শিরোনাম হতে পারে ‘আই ডু নট বিড ফেয়ারওয়েল’ বা ‘ইম্পসিবল  গুডবাইস’। আমার মনে হয় এটা দিয়ে শুরু করাটা তাঁদের জন্য ভালো। (আমার এর আগের বই) হিউম্যান অ্যাক্টস সরাসরি উই ডু নট পার্টের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর পর তাঁরা দ্য হোয়াইট বুক পড়তে পারেন। এটা আমার আত্মজীবনীমূলক বই। পাঠকেরা দ্য ভেজেটারিয়ান দিয়েও শুরু করতে পারেন। কিন্তু আমার মনে হয় উই ডু নট পার্ট দিয়ে শুরু করাটা ভালো।

জেনি রাইডেন : বিদেশি পাঠকদের কাছে সম্ভবত দ্য ভেজেটারিয়ান সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এই উপন্যাস নিয়ে কিছু বলুন।

হান কাং : এটি আমি তিন বছর ধরে লিখেছিলাম। কিছু কারণে ওই তিন বছর আমার জন্য বেশ কঠিন ছিল। আমাকে প্রধান কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং সেই নারী চরিত্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা অন্যান্য চরিত্রগুলোর চিত্রকল্প খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছিল। বর্ণনায় থাকা গাছপালা ও সূর্যকিরণের চিত্রকল্পের জন্যও আমাকে হাঁটুভাঙা পরিশ্রম করতে হয়েছিল। 

জেনি রাইডেন : শেষ প্রশ্ন, আপনি নোবেল পুরস্কার পাওয়াটি কীভাবে উদ্‌যাপন করতে চান?

হান কাং : কথা শেষ করে আমি আমার ছেলের সঙ্গে বসে চা পান করব। মদ পান করি না।  আজ নীরবেই আমি নোবেল পাওয়াটা উদ্‌যাপন করতে চাই।

জেনি রাইডেন : বেশ চমৎকার। আপনাকে আবারও অসংখ্য অভিনন্দন। অনেক ধন্যবাদ।

হান কাং : ধন্যবাদ।

জেনি রাইডেন: ঠিক আছে। ভালো থাকবেন।

হান কাং : আপনিও ভালো থাকবেন।

উল্লেখ্য, হান কাংয়ের ‘উই ডোন্ট নট পার্ট’ উপন্যাসটির ইংরেজি অনুবাদ ২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। উপন্যাসটির প্রকাশক পেঙ্গুইন বুকস।  

আরও পড়ুন শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট কে এই অনূঢ়া দিশানায়েকে

2 thoughts on “হান কাং: আমি বেশ অবাক ও সম্মানিত বোধ করছি 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *