আমাদের রাতে ভালো ঘুম না হলে সারা দিনটিই নষ্ট হয়ে যায়। কাজে কোন মনোযোগ থাকে না, পড়ার টেবিলে পড়তে ইচ্ছে করে না। তাই সুস্থ থাকতে হলে,কাজে মনযোগ বারাতে হলে রাতে অবশ্যই ভালোভাবে ঘুমানোর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য আমাদের কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে আমাদের ঘুম ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আসুন, জেনে নিই এমন কিছু নিয়ম ঘুমের আগে মেনে চলুন কিছু নিয়ম যা, আপনাকে রাতে ভালো ঘুমাতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে—
১.নির্দিষ্ট সময় নিয়ে ঘুম
প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের রোজ গড়ে সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমের দরকার। কিন্তু অনেক সময় নানা কারণে এর চেয়ে কম ঘুমিয়েই পার করতে হয় দিনের পর দিন। প্রয়োজনের চেয়ে কম ঘুম আমাদের জন্য যন্ত্রণাকর হয়ে যাবে। এজন্যই রাতে এই ঘাটতি পূরণ করে নিতে হবে।
২.ঘুমের আগে ব্যায়াম
রাতে ভালো ঘুমের জন্য দিনের বেলা হালকা ব্যায়াম করলে এর সুবিধা পাওয়া যায়। আলাদা করে বললে, রাতে খাওয়ার পুর্বে একটু হেঁটে আসতে পারেন। তবে মনে রাখবেন ঘুমানোর আগমুহূর্তে ব্যায়াম করা যাবে না। মূলত সন্ধ্যা বেলায় হালকা যোগব্যায়াম করতে পারেন। এতে শরীর ও মন দু-ই ঝরঝরে হবে।
৩.হালকা খাবার
রাতের মেন্যুতে হালকা খাবার রাখুন। বেশি তেল-মসলায় রান্না করা খাবার খাবেন না। এতে করে বদহজম হয়ে ঘুমের বারোটা বাজতে পারে।
৪. নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো
রুটিনমাফিক নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। শুধু রাতে নয়, যদি দিনেও ঘুমাতে চান, সে ক্ষেত্রেও একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা উচিত। প্রতিটি মানুষের নিজস্ব শারীরিক ঘড়ি আছে। এভাবে আপনার রুটিন যেন ঠিক থাকে, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
৫.সব কাজ শেষ করা
নিজের নিয়মিত কাজগুলো আগেভাগেই সেরে ফেলতে হবে। যেমন—অফিসের কাজ নিয়ে দুশ্চিন্তায় চুল না ছিঁড়ে, বরং আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রাখুন। সবশেষে ঠান্ডা মাথায় নির্ভার হয়ে শুতে যান। এতে ঘুম ভালো হবে।
৬.দিনে ঘুমের অভ্যাস না করা
অনেকের দিনের বেলায় একটু গড়িয়ে নেওয়ার অভ্যাস আছে। দিনে ঘুমাতেই পারেন, তবে বেশি সময়ের জন্য নয়। বেশি ঘুমালে তা আবার রাতের ঘুম নষ্ট করতে পারে। দিনে অল্প সময়ের ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। তবে আপনার যদি রাতে ঘুম না আসার রোগ থাকে, তবে এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৭.চা-কফি না খাওয়া
ক্যাফেইন ঘুম তাড়ায়। কোমল পানীয়, চা, কফি ও চকলেটে ক্যাফেইন থাকে। সাধারণত মানুষের দেহে ক্যাফেইন ঢুকলে, তা তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা কার্যকর থাকে। কিন্তু কিছু মানুষের দেহে এটি ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করে। এজন্য ক্যাফেইন থাকা খাবার খাওয়ার আগে আবুঝেশুনে খেতে হবে।
৮.চিকিৎসকের পরামর্শ
যদি এত কিছুর পরও আপনার রাতের ঘুম পরিমাণ মতো হচ্ছে না, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেকের শারীরিক বিভিন্ন কারণে ঘুমজনিত রোগ থাকে। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় স্লিপ ডিসঅর্ডার বলে। যদি এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য কেমন খাবার খাব,আর বাদ দিব
রাত মানেই অনেকের কাছে বিশ্রামের সময়। অনেকের কাছে আবার রাত এক বিভীষিকার নাম। অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ায় ভোগা মানুষদের কাছে রাত এক কৃষ্ণগহ্বর। যার শুরু আছে, শেষ নেই। ঘুমের এ সমস্যার একটা কারণ হতে পারে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস। আসুন আমরা জেনে নিই রাতে ভালো ঘুমের জন্য আমাদের কী কী খাওয়া উচিত, আর কী কী পরিহার করতে হবে।
যা যা খাবেন
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলুকে বলা হয় ‘ঘুমের মাসি’। কারণ, এখানে আছে ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস, যা শরীরকে শান্ত করতে সহায়তা করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্নায়ু ও মাংসপেশি শান্ত হওয়া বেশ জরুরি, যা মিষ্টি আলু অবলীলায় করে থাকে।
দুধ
রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ হতে পারে বেশ উপকারী। দুধে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড ‘ট্রিপটোফ্যান’ ঘুমের জন্য বেশ উপকারী।
ডিম
ঘুমের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ভিটামিন হলো ‘ডি’। ভিটামিন ডির ঘাটতি থাকলে সহজে ঘুম আসে না। মস্তিষ্কের জিএবিএরজিক নিউরন ঘুমাতে সাহায্য করে। ডিমের ভিটামিন ডি ঠিক সেখানেই কাজ করে।
ফল ও বাদাম
আখরোট, কাঠবাদাম থেকে শুরু করে ফলমূল, শাকসবজি—সবই ঘুমের জন্য বেশ উপকারী। আখরোট ও কাঠবাদামে রয়েছে ট্রিপটোফ্যান, যা স্নায়ু ও মাংসপেশিকে শান্ত করে। অন্যদিকে ফলমূল, সবজি ইত্যাদি ভিটামিনের জোগান দেয়, যা কিনা ঘুমে সাহায্য করে।
যা খাবেন না
ক্যাফেইন–জাতীয় পদার্থ
চা, কফি, ক্যাফেইন–জাতীয় পদার্থ হলো মানবদেহের ঘুমের অন্যতম বড় শত্রু। তাই রাতে ভালো ঘুমের জন্য সন্ধ্যার পর এই জাতীয় পদার্থ খাওয়া থেকে থেকে দূরে থাকুন।
রাতের খাবারে ভারী খাবার
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে রাতে খাবার গ্রহণ করুন। অনেকেই দিনের শেষ খাবার হিসেবে একটু ভারী খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু রাতে ভালো ঘুমের জন্য অল্প খাওয়া উত্তম। রাতে যেহেতু কোনো ভারী কাজ করা হয় না, তাই খাবার হজমও হয় না। ফলে তা পেটে থেকে যায়। আর ভরা পেটে ঘুম দ্রুত আসতে চায় না।
ঝালজাতীয় খাবার
ঝালজাতীয় খাবার খাদ্য হজমে অসুবিধা তৈরি করে। তাই রাতে ঝালযুক্ত খাবার যত কম রাখা যায়, তত ভালো।
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার
অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চিনি শরীরে বাড়তি উত্তেজনার সৃষ্টি করে, যা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়।
1 thought on “ঘুমের আগে মেনে চলুন কিছু নিয়ম”