দেশের নির্বাচন যতই দেরিতে হবে, ততই ষড়যন্ত্র বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে আয়োজিত জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের নির্বাচন যত দেরি হবে, ততই ষড়যন্ত্র বৃদ্ধি পাবে।
জনগণের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারকে হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার বিরুদ্ধে দেশের লক্ষকোটি মানুষ এক যুগের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করেছে, সেই স্বৈরাচার কিন্তু বসে নেই। সেই স্বৈরাচার তাদের দেশি-বিদেশি প্রভুদের সাথে মিলে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে।’
তারেক রহমান বলেন, ‘নির্বাচন যত দেরিতে হবে, এই দেশের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাব্যবস্থা, এই দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসুবিধা, এই দেশের বিচারব্যবস্থার সমস্যা, এই দেশের প্রশাসনের সমস্যা, এই দেশের কৃষকদের সমস্যা, এই দেশের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যা, যতগুলো সমস্যা এই স্বৈরাচার করে গিয়েছে, তা আরও বৃদ্ধি যাবে। একমাত্র একটি নির্বাচনের মাধ্যমেই সম্ভব ধীরে ধীরে দেশের সমস্যাগুলোর সমাধান করা।’
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সক্ষম মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সক্ষম হলেই প্রকৃত ব্যক্তিগুলো নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন। যাঁরা সত্যিকার অর্থেই জনগণের কথা বলবেন, জনগণের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করবেন। প্রতিটি সেক্টরের সমস্যা সমাধানের বিষয়ে চিন্তা করবেন। একটি প্রকৃত নির্বাচনের মাধ্যমে যদি প্রকৃত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হন, তাহলেই একমাত্র সম্ভব।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশবাসী বিএনপিকে দায়িত্ব দিতে চায়। দায়িত্ব নিতে হলে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। দায়িত্ব নেওয়ার মতো নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। চুয়াডাঙ্গায় আগামী দিনে কারা নেতৃত্ব দেবেন, সেই নেতা যেমন হোক আমরা বাছাই করে নেব, তাই আসুন আজ সকলে মিলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, সেটা বড় কথা না, আমরা যে যেই পর্যায়ের নেতা বা কর্মী হয়ে থাকি না কেন। আপনি একজন বিএনপির কর্মী, আপনি একজন শহীদ জিয়ার সৈনিক। তাই সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আপনাকে বুঝতে হবে আপনার কাছে আপনার এলাকার মানুষের প্রত্যাশা কী এবং তা অনুধাবন করে কাজ করতে হবে।’
শীর্ষ এই নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের সংগঠনকে আজকে গড়ে তুলতে সম্মেলন যেমন প্রয়োজন, প্রকৃত নেতৃত্ব ও ভবিষ্যতের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে সম্মেলন যেমন প্রয়োজন, একইভাবে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের যদি পরিবর্তন করতে হয়, বাংলাদেশকে যদি গড়ে তুলতে হয়,, সেই কাজ যদি শুরু করতে হয়, আবার যদি আমাদের খাল খনন কর্মসূচি শুরু করতে হয়, আবার যদি শিল্পবিপ্লব শুরু করতে হয়, আবার যদি আমাদের কৃষকের সমস্যার সমাধান করতে হয়, অবশ্যই দরকার প্রকৃত জনপ্রতিনিধি। যারা দেশের স্বার্থে কথা বলবে, মানুষের কথা বলবে এবং তার জন্য প্রয়োজন নির্বাচন।
এই কথাটা পরিষ্কারভাবে আজকে আমাদের তুলে ধরতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে। তুলে ধরতে হবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে। কারণ, পৃথিবীতে যেসকল গণতান্ত্রিক দেশ আছে, তারা এই গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমেই ধীরে ধীরে তাদের দেশের অনেক সমস্যার সমাধান করেছে।’
সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। মহাসচিবসহ নেতারা মঞ্চে আসন গ্রহণের পর জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) পরিবেশনায় দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।
উদ্বোধনী বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ মুজিব এ দেশে প্রথম ফ্যাসিবাদের সূচনা করেন। শেখ মুজিব গণতন্ত্রকে হত্যা করেন। আওয়ামী লীগ মানেই চুরি-দুর্নীতি। বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে একদিকে সন্ত্রাস, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশকে দিয়ে খুন, গুম করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার হাত ধরে এ দেশে নতুন সূর্য উঠেছে। সেই সূর্যের আলোয় আলোকিত হতে হবে। এ দেশের মানুষের চাওয়া আর বিএনপির চাওয়া এক। আমরাও চাই তরুণদের হাতে থাকবে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব। এ জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুল বারী, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান (দুদু) ও নিতাই রায় চৌধুরী, , কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ (রুমী), চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুণ ও সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন এবং বক্তব্য দেন।
সম্মেলনের শুরুতে দলের প্রয়াত নেতা-কর্মীদের স্মরণে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ এবং বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের প্রয়াত সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জেলা বিএনপির সদস্য খন্দকার আবদুল জব্বার।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এম এ তালহা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহজাহান খান, জাসাসের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবীব, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশিদ, জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক তবারক আল্ জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি এম জেনারেল ইসলাম, জেলা মৎস্যজীবী দলের সভাপতি কামরুজ্জামান এবং জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী রউফুন নাহার।
আরও পড়ুন নতুন সিইসি ও ইসিদের শপথ আগামী রোববার