চা পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়। অনেকেই সকালে দিনের শুরুতে এক কাপ চা পান করেন এবং কাজের ফাঁকে বা আড্ডার সময় চা পান করেন। কারও আবার চায়ের প্রতি ভালোবাসাটা ‘নেশা’র পর্যায়ে চলে যায়। নিঃসন্দেহে চা একটি সুপেয় পানীয়। তবে রোজ চা খাওয়ার এই অভ্যাস কি আদতে ভালো? না কি এতে কোনো ক্ষতি হতে পারে?
তবে রোজ চা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নাকি খারাপ, তা নির্ভর করে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় যেমন চায়ের ধরণ, পরিমাণ, এবং ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা ইত্যাদির উপর। আসুন, বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।
চায়ের পুষ্টিগুণ
চায়ের প্রধান উপাদান হলো ক্যাফেইন, যা একটি প্রাকৃতিক উদ্দীপক। এটি আমাদের মনোযোগ বৃদ্ধি করতে, ক্লান্তি দূর করতে এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও, চায়ের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড), যা শরীরে কোষের ক্ষয় রোধ করে এবং হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
চায়ের ধরণ অনুযায়ী প্রভাব
- গ্রিন টি: অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এবং ওজন কমাতে সহায়ক।
- ব্ল্যাক টি: ক্যাফেইনের পরিমাণ বেশি, তবে এটি শক্তি যোগায়।
- হার্বাল টি: সাধারণত ক্যাফেইনমুক্ত এবং আরামদায়ক।
যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
এক-দুই কাপের মধ্যেই রোজকার চায়ের পরিমাণ সীমিত রাখা ভালো, বড়জোর তিন কি চার কাপ। চায়ে যদিও কফির চেয়ে ক্যাফেইনের মাত্রা কম, তারপরও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। যার ফলে, পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে ক্যাফেইনের মাত্রাও বেড়ে যাবে স্বাভাবিকভাবেই। আর তাতে বুক ধড়ফড়, অস্থিরতা, তিরিক্ষি মেজাজ, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, ঘুমের সমস্যার মতো মুশকিলে পড়তে পারেন আপনি। অতিরিক্ত ক্যাফেইনের কারণে বুকে ব্যথা, দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, অত্যধিক তৃষ্ণা, এমনকি বমি বা পাতলা পায়খানাও হতে পারে।
খালি পেটে চা খাবেন না। ‘বেড টি’ সংস্কৃতি খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। এর কারণ হলো, খালি পেটে চা খেলে অ্যাসিডিটির ঝুঁকি বাড়ে।
খাবার ও চা খাওয়ার মধ্যে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টার ব্যবধান রাখুন। কারণ, ট্যানিন নামক একটি উপকরণ রয়েছে চায়ের ভিতর, যা আমাদের দেহে আয়রন শোষণ হতে বাধা পায়। সঠিকভাবে খাবারের আয়রন শোষিত না হলে আপনি কিন্তু আয়রনের অভাবজনিত জটিলতায় ভুগতে পারেন।
চায়ে চিনি দেবেন না। মধু কিংবা গুড়কেও চিনির বিকল্প হিসেবে ধরে নেবেন না। মিষ্টতা আনার যেকোনো উপকরণই শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই যেমন বাড়তি ওজন। তাই আজ থেকেই চায়ে চিনি খাওয়ার বদ অভ্যাস থাকলে অল্প অল্প করে তা কমিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করুন।
চায়ের সঙ্গে বিস্কুট, পুরি-শিঙারা কিংবা এ–জাতীয় খাবার খেলেও কিন্তু বাঁধবে বিপত্তি। চায়ে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম, কিন্তু এগুলো সবই বাড়তি ক্যালরির উৎস। তাই ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে; বরং সারা দিনের ক্যালরির একটা হিসাব করে নাশতাসহ সব খাবার গ্রহণ করা ভালো অভ্যাস।
চা খাওয়ার খারাপ দিক
১. অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের সমস্যা: দিনে তিন-চার কাপের বেশি চা পান করলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যাফেইন জমা হতে পারে, যা ঘুমের সমস্যা, অস্থিরতা এবং রক্তচাপ বাড়ানোর কারণ হতে পারে।
২. গ্যাস্ট্রিক সমস্যা: খালি পেটে চা পান করলে অনেকের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে, চা অম্লতা বাড়াতে পারে।
৩.আয়রনের শোষণে বাধা: চায়ের মধ্যে থাকা ট্যানিনস খাদ্য থেকে আয়রন শোষণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই আয়রনের অভাব হলে চা পান কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
৪. দাঁতের সমস্যা: বেশি চা পান করলে দাঁতে দাগ পড়তে পারে এবং দাঁতের ক্ষয় হতে পারে।
এছাড়া ,বিকেলের পর চা না খাওয়াই ভালো। তাতে ঘুম আসতে দেরি হতে পারে। সুস্থ থাকতে রাতের ঘুম ভীষণ জরুরি।
চায়ের আছে চমৎকারি দিক
চায়ের পুষ্টি উপাদানের অধিকাংশই চা বানানোর সময় উত্তাপে নষ্ট হয়ে যায়, তবে রয়ে যায় কিছুটা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান। দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক রাখতে এবং বয়সজনিত পরিবর্তন ঠেকাতে এসব উপাদান খানিকটা ভূমিকা রাখতে পারে। অবশ্য এই ভূমিকা আদতে খুব বড় কোনো ব্যাপার নয়। এসব উপকারের চেয়ে বরং আপনি সতেজতার খোঁজেই চা খেতে পারেন।
আরও পড়ুন বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ গাড়ি