প্রকল্প

নতুন করে যাচাই করা হবে ৭ প্রকল্পের ব্যয়

বাংলাদেশ
Spread the love

শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতা হারানোর পরেও সাতটি মেগা প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি অর্থাৎ এই সাতটি প্রকল্পের কাজ এখন চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পগুলোতে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই সাতটি প্রকল্পের মধ্যে ছয়টি প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি শেষ হয়ে গেছে অন্য প্রকল্পটি হল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তুলনামূলকভাবে এই প্রকল্পটিতে কাজ আরো বেশি বাকি রয়েছে। বিপুল অর্থ ব্যয় করে নির্মাণ করা হবে এসব প্রকল্প। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার খতিয়ে দেখবে এসব প্রকল্প সঠিকভাবে নেওয়া হয়েছে কিনা বা এর অর্থ কি পরিমান ব্যয় হবে তা স্বাভাবিক কিনা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে এ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। 

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ পর্যালোচনার এই কাজটি সম্পন্ন করবে। খতিয়ে দেখা হবে এ প্রকল্প গুলো আসলে দরকার ছিল কিনা বা কেন নেওয়া হয়েছিল খোঁজা হবে এসব প্রশ্নের উত্তর। পাশাপাশি এর খরচ নিয়েও পর্যালোচনা করা হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বেশ কিছু বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্প গুলোকে মূলত মেগা প্রকল্প বলা হয়। রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকার মেট্রো রেল, পদ্মা সেতু, চারলেন সড়ক এসব বড় বড় মেগা প্রকল্প। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে এসব প্রকল্প গুলো সবগুলো প্রয়োজন অনুসারে নেওয়া হয়নি অনেকগুলোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এসব প্রকল্প গুলো নেয়া হয়েছে মূলত অর্থ উপার্জনের জন্য আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এসব প্রকল্পে ব্যয় অনেক বেশি করে নেওয়া হয়েছে। তাই অন্তবর্তী সরকার এই প্রকল্প গুলোর অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা খুঁজছে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করেছে আইএমডি। 

দৈনিক প্রথম আলো সূত্রে জানা যায় বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এ প্রকল্প গুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই অর্থনীতিবিদের মতে গত সরকারের নেওয়া সকল প্রকল্প গুলোই পর্যালোচনা করা দরকার। পায়রা বন্দরের জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক করতে প্রতি বছর প্রায় ৬০০ কোটি টাকা লাগবে। পুরনো আমলের চুল্লির কারণে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউরিনিয়াম বেশি লাগবে এমন কথা শোনা যাচ্ছে। এসব প্রকল্পে অনেক খরচ হয়েছে। কিন্তু তা থেকে আমরা কি পরিমাণ সুবিধা পাচ্ছি তা মূল্যায়ন করতে হবে। পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু অর্থনীতিতে কতটা আমরা মূল্য পাচ্ছি তা মূল্যায়ন করতে হবে। 

পদ্মা সেতুর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে চলতি বছরের জুন মাসে। এই প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু এই প্রকল্প টিতে ২২ হাজার কোটি টাকা যথেষ্ট ছিল এমনটাই নিশ্চিত করেছে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন। গত সরকারের সময় জানানো হয় এ সকল টাকা জনগণের কর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

২০১২ সালে একটি মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। রাজধানীর উত্তরা থেকে মিরপুর ও ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত এই মেট্রোরেল প্রকল্প ছিল। বর্তমানে মেট্রোরেল চালু রয়েছে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। বর্তমানে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের জন্য বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩,৪৭২ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় এই প্রকল্পের কাজ ৯০% শেষ হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা জাপানের জাইকা ঋণ দিয়েছে।

৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকায় পদ্মার সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল মূলত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য। এই প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে। ৯৫ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এই প্রকল্পর মধ্য দিয়ে দিনে ৪৮ টি ট্রেন চলার কথা। কিন্তু দিনে মাত্র ১০ টি ট্রেন চলাচল করে।

১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকায় রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ টাকাগুলো রাশিয়া ঋণ দিয়েছে। এই প্রকল্প টি ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। ২০২৭ সালের প্রথম দিক থেকে বছরে প্রায় ৫০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

মাতারবাড়ি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পটির প্রায় ৮৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজগুলো শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে। দুইবার সংশোধনের পর পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পটির খরচ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। প্রকল্পটির কাজ প্রায় ৯৩ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে। এ প্রকল্প শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে আগে থেকেই। কেননা মংলা বন্দর রয়েছে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যেই পাশাপাশি নিয়মিত ড্রেজিং না করা হলে এই বন্দরটি কার্যকর করা কঠিন হয়ে যাবে।

আইএমডি থেকে জানানো হয় এসব প্রকল্প গুলো নিয়ে শিগগিরই পর্যালোচনা করা হবে।

আরোও পড়ুন  হাসিনার মন্ত্রী এমপিদের ৫৮৯ জনের পাসপোর্ট বাতিল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *