তীব্র শীতে ফিলিস্তিনের গাজায়

তীব্র শীতে ফিলিস্তিনের গাজায় মরছে শিশুরা

আন্তর্জাতিক
Spread the love

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গাজায় তীব্র শীতে গত সপ্তাহে অন্তত পাঁচ শিশু মারা গেছে। ইসরায়েল গত ১৫ মাস ধরে টানা গাজায় হামলা চালাচ্ছে । ইসরায়েলি  হামলায় সেখানে প্রতিদিন লোকজন প্রাণ হারাচ্ছেন। এর মধ্যে তীব্র শীত জেঁকে বসায় ফিলিস্তিনের লোকজনের দুর্দশা আরও বাড়ছে। ইসরায়েলি হামলায় ৪৫ হাজার ৫৪১ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৮ হাজার ৩৩৮ জনে পৌঁছেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত রোববার নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে মারা যায় তিন সপ্তাহের কম বয়সী শিশু জুম্মা আল–বাতরান। মধ্য গাজার আল–আকসা শহীদ হাসপাতালে জুম্মা ও তার যমজ ভাই আলীকে জরুরিভাবে ভর্তি করা হয়। সোমবার মারা যায় আলী। ফিলিস্তিনের সংবাদ সংস্থা ওয়াফা এ তথ্য জানায়।

যমজ ওই দুই শিশুর জন্ম হয়েছিল নির্দিষ্ট সময়ের আগেই। গাজার বর্তমান পরিস্থিতিতে আবহাওয়াসংক্রান্ত রোগে সংক্রমিত হয়ে নিহতের তালিকায় এ দুটি শিশুর নামও যুক্ত হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গাজার মানবিক পরিস্থিতি। সেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল অভিযান ও বোমা হামলায় অন্তত একবার বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে ৯০ শতাংশ মানুষকে ।

ইসরায়েলি বাহিনী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরু করে । সেখানে এর পর থেকে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তারা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী হামাস যোদ্ধা ও বেসামরিক লোকজনের মধ্যে কোনো বাছবিচার করে না। গতকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৪৫ হাজার ৫৪১ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৮ হাজার ৩৩৮ জনে পৌঁছেছে। যার মধ্যে ১৭ হাজার ৪৯২ জন শিশু মারা গিয়েছে।

ইসরায়েলি এই হামলার মধ্যেই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে জন্ম নেওয়া শিশুদের এখন তীব্র শীতের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজার উপকূলের কাছে ঢালু তাঁবুর আশ্রয়শিবিরে হাজারো লোকজনকে আশ্রয় নিতে হয়েছে। সেখানে তাদের বৃষ্টি ও শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট কাপড় ও তাঁবু নেই। অনেকের কাছে তাঁবুও বিলাসপণ্যের মতো। অনেকের তাঁবু ছেঁড়াফাটা। তা দিয়ে ঠান্ডা আটকানো সম্ভব নয়।

গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ নেই বললেই চলে। সেখানে জেনারেটর চালানোর মতো জ্বালানিও নেই। কম্বল, উষ্ণ কাপড়ের তীব্র সংকট। এমনকি আগুন জ্বালানোর কাঠও নেই।

গাজায় আশ্রয়হীনদের জন্য তৈরি একটি শিবির সম্প্রতি পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের মুখপাত্র রোজালিয়া বোলেন। তিনি বলেন, ‘গাজার শিশুরা শীতে অবর্ণনীয় কষ্ট পাচ্ছে। তারা অসুস্থ ও আতঙ্কিত।’ রোজালিয়া বলেন, শিশুদের এখনো অনেকেই গরমের কাপড় পরে রয়েছে। সেখানে রান্নার গ্যাস নেই। তারা ময়লা আবর্জনা ও প্লাস্টিক জড়ো করে পোড়াচ্ছে।

গত শুক্রবার গাজায় তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষার জরুরি দপ্তর থেকে আশ্রয়শিবিরে থাকা লোকজনকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। তাদের গরম পানি পান করার পাশাপাশি শরীর গরম রাখতে উষ্ণ কাপড় পরতে বলা হয়েছে। মা–বাবাকে শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা খেয়াল করতে বলা হয়েছে। তাঁবুর নিচে কার্ডবোর্ড দিয়ে তা গরম রাখতে বলা হয়েছে।

এদিকে ফিলিস্তিনে গত কয়েক দিনে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে ইসরায়েলকে হাসপাতালে হামলা বন্ধে আহ্বান জানানো হয়েছে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের সেনারা দুটি হাসপাতালে হামলা করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, গাজার হাসপাতালগুলো আবার যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্যসেবা হুমকির মুখে। গত রোববার গাজা সিটির আল ওয়াফা হাসপাতালে হামলা চালিয়ে সাতজনকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ছাড়া ২৪০ জনকে কামাল আদওয়ান হাসপাতাল থেকে ধরে নিয়ে গেছে।

আরও পড়ুন মণিপুরে দুই গ্রামে সশস্ত্র হামলা

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *