২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিভিন্ন শ্রেণিতে আওয়ামী আমলে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে ২০১২ সালে প্রণয়ন করা পাঠ্যবই দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। অন্যান্য শ্রেণির মত পঞ্চম-অষ্টম শ্রেণির বইয়েও আসছে ব্যাপক পরিবর্তন। সে জন্য পুরোনো পাঠ্যবইগুলো পরিমার্জন করে অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন করে ছাপানোর উপযোগী করা হয়েছে।
. পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ছয়টি প্রবন্ধ নতুন করে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত।
- ‘সন অব দ্য সয়েল’ এবং ‘মুজিব ইন স্কুল ডেজ’সহ ষষ্ঠ শ্রেণির ইংলিশ বই থেকে তিনটি লেসন বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
- ‘বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড বাংলাদেশ’ নামে অষ্টম শ্রেণির ইংলিশ বই থেকে একটি লেখা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
এরই মধ্যে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্যবিষয়ক পাঠ্যবইয়ে সাতটি গদ্য ও চারটি কবিতা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর নতুন করে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের ওপর লেখা একটি সংকলিত গদ্যসহ মোট দুটি গদ্য। এ ছাড়া একটি উপন্যাসের পরিবর্তে আরেকটি উপন্যাস যুক্ত করা হচ্ছে। একই শ্রেণির ইংরেজি বই থেকে একটি অধ্যায় বাদ দিয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি নিয়ে লেখাসহ মোট নতুন তিনটি অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে।
বাংলা বইয়ে যত সংযোজন-বিয়োজন
পঞ্চম শ্রেণির আমার বাংলা বইয়ে ছয়টি প্রবন্ধ নতুন করে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে একটি প্রবন্ধ জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ শীর্ষক । বাকি পাঁচটি প্রবন্ধ হলো ‘সবার আমি ছাত্র’, ‘জলপরী ও কাঠুরের গল্প’, ‘নোলক’, ‘কুমড়ো ও পাখির কথা’ এবং ‘দৈত্য ও জেলে’। এই বই থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে সাতটি গল্প। একই শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি বই থেকে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর এগুলো হলো ‘ফেব্রুয়ারির গান’, ‘মাটির নিচে যে শহর’, ‘দেখে এলাম নায়াগ্রা’, ‘রৌদ্র রেখে জয়’, ‘মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী’, ‘শহিদ তিতুমীর’ এবং ‘অপেক্ষা’।
এ ছাড়া এই বইয়ের ‘স্মরণীয় যাঁরা চিরদিন’ গল্পের শিরোনাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘স্মরণীয় যাঁরা বরণীয় যাঁরা’।
‘কার্টুন ব্যঙ্গচিত্র ও পোস্টারের ভাষা’ নামে জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা একটি গদ্য রয়েছে। এ ছাড়া কামরুল হাসানের লেখা ‘আমাদের লোকশিল্প’ গদ্যটি নতুন আরেকটি গদ্য যুক্ত করা হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণির চারুপাঠ বইয়ে। আর বাদ দেওয়া হয়েছে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘কত দিকে কত কারিগর’ গদ্যটি। সংযোজন–বিয়োজনের ফলে এখন এই বইয়ে গদ্যের মোট সংখ্যা হচ্ছে নয়টি। পুরোনো বইয়ে তা ছিল আটটি।
একই পাঠ্যবই থেকে একটি কবিতা বাদ দিয়ে আরেকটি কবিতা যুক্ত করা হচ্ছে। বাদ দেওয়া হয়েছে রোকনুজ্জামান খানের লেখা ‘মুজিব’ কবিতাটি। তবে একই লেখকের ‘চিঠি বিলি’ নামে একটি কবিতা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে এই বইয়ে কবিতার মোট সংখ্যা আগের মতো নয়টিই থাকছে।
সপ্তম শ্রেণির ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’ সেলিনা হোসেনের লেখা গদ্যটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে যার পরিবর্তে ‘সিঁথি’ নামে হাসান রোবায়েতের লেখা একটি কবিতা যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কবিতা জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা। অন্যদিকে গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের লেখা ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে’ এবং সুনির্মল বসুর লেখা ‘সবার আমি ছাত্র’ নামে দুটি কবিতা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ছাড়া সেলিনা হোসেনের লেখা ভ্রমণকাহিনি ‘সুইজারল্যান্ডের দিনগুলি’ সপ্তম শ্রেণির আনন্দ পাঠ বইয়ে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা বই থেকে কামরুল হাসানের ‘আমাদের লোকশিল্প’ গদ্যটি বাদ দেওয়া হচ্ছে। আর দুটি গদ্য যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো হলো মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’ এবং জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা সংকলিত গদ্য ‘গণ অভ্যুত্থানের কথা’। এখন এই বইয়ে মোট গদ্যের সংখ্যা দাঁড়াল ১২। আগে ছিল ১১টি।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা ‘আমড়া ও ক্র্যাব নেবুলা’ অষ্টম শ্রেণির আনন্দ পাঠ বই থেকে উপন্যাসটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইংরেজি বইয়ে যেসব পরিবর্তন
‘সন অব দ্য সয়েল’ এবং ‘মুজিব ইন স্কুল ডেজ’সহ ষষ্ঠ শ্রেণির ইংলিশ ফর টুডে বই থেকে তিনটি লেসন বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ‘আওয়ার প্রাইড’সহ যার পরিবর্তে দুটি লেসন যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বইয়ে জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা ‘আ নিউ জেনারেশন’ এবং ‘আওয়ার উইনার ইন দ্য গ্লোবাল এরেনা’ নামে দুটি নতুন লেসন সপ্তম শ্রেণির ইংলিশ ফর টুডে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যদিকে তিনটি লেসন ‘বঙ্গবন্ধু’স লাভ ফর স্পোর্টস’, ‘বঙ্গমাতা: আওয়ার সোর্স অব ইন্সপিরেশন’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু’স রেসপন্স টু ন্যাচারাল ক্যালামিটিস’ নামে বাদ দেওয়া হচ্ছে। এই বইয়ে একটি লেসন পরিমার্জন করে লেখা হয়েছে।
অষ্টম শ্রেণির ইংলিশ ফর টুডে বই থেকে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড বাংলাদেশ’ নামে একটি লেখা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর দুটি লেখা নতুন করে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা ‘উইমেন’স রোলস ইন আপরাইজিং’। আরেকটি হলো ‘হিউম্যানস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’।
কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যবইয়ে কিছু সংযোজন–বিয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাঠ্যবই পরিমার্জনের সঙ্গে যুক্ত লেখক রাখাল রাহা। তিনি গতকাল বলেন, কিছু ক্ষেত্রে বিষয়কে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যক্তিবিশেষকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। এখন তাঁরা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন। আবার ইতিহাসের বর্ণনায় কিছু ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন ও অতিকথন ছিল। তা চিহ্নিত করে পরিমার্জন করা হয়েছে। আবার জুলাই গণ–অভ্যুত্থান বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ঘটনা, তাই ন্যূনতম হলেও এর প্রতিফলন যেন পাঠ্যবইয়ে থাকে, সে জন্য নানা পর্যায় থেকে মত ছিল। সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন ইউরোপের এই ৫ বৃত্তির আবেদন চলছে