গরুর মাংস সস্তায় ব্রাজিল রপ্তানি করতে

গরুর মাংস সস্তায় ব্রাজিল রপ্তানি করতে চেয়েছিল 

বাংলাদেশ
Spread the love

ব্রাজিল অনেক কম মূল্যে গরুর মাংস রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকারকে ; কিন্তু সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রয়োজনীয় সনদ (সার্টিফিকেশন) না পাওয়ার কারণে ব্রাজিল বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত গরুর মাংস রপ্তানি করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস।

আজ বুধবার রাজ ধানীর বারিধারায় অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত। ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই) আগামী ১৫ থেকে ১৮ জুন সাও পাওলো শহরে অনুষ্ঠিতব্য ‘মেড ইন বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৫’ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্থাটি ।

গত ২০২৪ সালের  এপ্রিলে লাতিন আমেরিকার দেশটি বাংলাদেশে প্রতি কেজি গরুর মাংস সাড়ে চার মার্কিন ডলারে (তখনকার বিনিময় হারে ৪৯৫ টাকা) রপ্তানি করতে প্রস্তাব দিয়েছিল। ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা ওই মাসে দুই দিনের সফরে ঢাকায় এলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছিল কূটনীতিক সূত্রগুলো।

যখন ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস কমবেশি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, তখন ব্রাজিল বাংলাদেশে গরুর মাংস রপ্তানির প্রস্তাব দেয়। ঢাকার বাজারে বর্তমানে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস জানান, ব্রাজিল বিশ্বের সব চেয়ে বড় গরু ও পোলট্রি মাংস উৎপাদনকারী দেশ। বিশ্বের অনেক মুসলিমপ্রধান দেশেই ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানির অনুমতি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই অনুমতি নেই। ওই অনুমতি পাওয়ার জন্যই ব্রাজিল চেষ্টা করছিল বলে রাষ্ট্রদূত জানান।

সনদ বা সার্টিফিকেশন পাওয়ার জন্য তিনি কীভাবে দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন, এ সম্পর্কেও কথা বলেন পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস। তিনি জানান, তিনি প্রথমে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যেতে। এরপর ব্রাজিলের প্রতিনিধিরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘(তৎকালীন) মন্ত্রীর কাছে যাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বাংলায় লেখা কাগজপত্র দেখিয়ে নানা ধরনের নীতিমালার কথা জানান। তবে আমি এত নীতিমালা বুঝিনি। এককথায় যেটা বুঝেছি তা হলো, তাঁরা অনুমতি দেননি। তবে বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি শেষ পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া যাবে।’

পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস জানান, শুধু দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নয়, ব্রাজিল বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগ করতে চায়।  নবায়নযোগ্য জ্বালানি, কৃষি, ওষুধশিল্পসহ নানা খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশ দুটি পরস্পরের সঙ্গে কাজ করতে পারে বলে জানান তিনি।

ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত বলেন, কৃষি–বাণিজ্যে তাঁর দেশের অবস্থান অনেকটা পাওয়ার হাউস বা শক্তিকেন্দ্রের মতো। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ব্রাজিল থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারে। তিনি জানান, ব্রাজিলের মানুষেরা বছরে মাথাপিছু ১০০ কেজি গরুর মাংস খায়। বাংলাদেশে এ হার অনেক কম। ব্রাজিলে একটি গরুর থেকে দিনে গড়ে ৪৫ কেজি দুধ পাওয়া যায়; বাংলাদেশে পাওয়া যায় সাত-আট কেজির মতো।

পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস বলেন, ‘সুতরাং শুধু মাংস রপ্তানি নয়, প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমেও বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে পারে ব্রাজিল। তবে এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।’

ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত বলেন, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কর্মসূচি রয়েছে তার দেশটিতে। ব্রাজিল সরকার এ জন্য প্রচুর পরিমাণে ওষুধ কিনে থাকে। বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কর্মসূচি কারণে প্রচুর ওষুধ রপ্তানি করতে পারে। 

আরও পড়ুন ছাত্রলীগ কর্মী পরীক্ষা দিতে এসে গ্রেফতার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *