কিশোরীদের এইচপিভি টিকা বিনা মূল্যে দেওয়া

কিশোরীদের এইচপিভি টিকা বিনা মূল্যে দেওয়া হবে

বাংলাদেশ
Spread the love

ঢাকা বাদে  ২৪ অক্টোবর থেকে সাতটি বিভাগে স্কুল ও স্কুলের বাইরে বিনা মূল্যে এ টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) পরিচালিত এ কার্যক্রম চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। কিশোরীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এ বছরও এক ডোজ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। প্রথমবারের মতো ২০২৩ সালে সরকারিভাবে বিনা মূল্যে এইচপিভি টিকা দেওয়া শুরু হয়েছিল।  তবে, প্রথম পর্যায়ে শুধু ঢাকা বিভাগে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (ইপিআই অ্যান্ড সার্ভিল্যান্স) মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, গত বছরের মতো এ বছরও স্কুলের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীরা এ কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে।

আগামী বছর থেকে সরকারিভাবে এ টিকা দেওয়া নিয়মিত কার্যক্রমের আওতায় পড়বে। অর্থাৎ স্কুলের ক্ষেত্রে শুধু পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীরা এ টিকা পাবে। আর স্কুলের বাইরে থাকা সুবিধাবঞ্চিত কিশোরী বা স্কুল থেকে ঝরে পড়া কিশোরীদের মধ্যে ১০ বছর বয়সীরা পাবে এ টিকা।

টিকা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আনোয়ার হোসেন আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ২৪ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচপিভি টিকা কার্যক্রমে মাঠপর্যায়ে সহায়তা করতে ১৬টি মন্ত্রণালয়কে গতকাল বুধবার ডিও লেটার (আধা সরকারি পত্র) পাঠানো হয়েছে। ঢাকা ছাড়া সাতটি বিভাগের ৫১টি জেলায় এ কার্যক্রম চলবে। এই কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিটি কমিটিতে দুজন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।

ইপিআইয়ের তথ্য অনুসারে, গত বছর প্রথম পর্যায়ে ঢাকা বিভাগে ১৫ অক্টোবর থেকে আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ লাখ ৮ হাজার ১৮৩ জনকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয় ৭৫ । ঢাকাকে দ্বিতীয় পর্যায়ে এ কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এবার মোট ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ কিশোরীকে বাকি সাত বিভাগে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া  স্কুলের বাইরে থাকা ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬৭৬ কিশোরীকে টিকা দেওয়া হবে।

আবেদন

https://vaxepi.gov.bd/registration ওয়েবসাইটে গিয়ে যারা টিকা নিবেন ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। দেশে নারীরা যত ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে জরায়ুমুখ ক্যানসার। তিনি আরও জানান, এ বছর অন্তত ৯৫ শতাংশ কিশোরীকে টিকার আওতাভুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। লক্ষ্য পূরণে এবার কওমি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলো থেকে সহায়তা পাওয়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে সরকারিভাবে গাজীপুরে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০ হাজারের মতো ১০ বছর বয়সী মেয়েশিশুকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন পর ২০২১ সালের ১২ মার্চ গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) বাংলাদেশকে এইচপিভি টিকার অনুমোদন দেয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) হালনাগাদ সুপারিশে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে এক ডোজ টিকাই কার্যকর বলে জানানো হয়েছে। এ ক্যানসার প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ৯০ শতাংশকে টিকা, ৩৫ ও ৪৫ বছর বয়সে অন্তত দুবার স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা এবং ৯০ শতাংশকে চিকিৎসার আওতায় আনার লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে।

অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ নেই, তাদেরও বিশেষভাবে তালিকাভুক্ত করে টিকা দেওয়া হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার গবেষণাবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইএআরসির সবশেষ ২০২০ সালের গ্লোবোক্যান প্রতিবেদন অনুসারে, জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্তের দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। দেশে বছরে নতুন করে জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হন ৮ হাজার ২৬৮ জন ও মারা যান ৪ হাজার ৯৭১ জন।

কেন টিকা নিতে হবে

অল্প বয়সে বিয়ে, ঘন ঘন গর্ভধারণ, বেশি সন্তান জন্ম দেওয়া, একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানো স্বামীদের কারণেও জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবভনতা থাকে বলে মনে করেনচিকিৎসকরা। অতিরিক্ত রক্তস্রাব, ঘন সাদা স্রাব ও অনিয়মিত রক্তস্রাব  লক্ষণগুলো জরায়ুমুখ ক্যানসারের মধ্যে রয়েছে।

৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিশোরীদের টিকা দিলে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ হতে পারে।  তবে কিশোরীদের ৩০ বছরের বেশি বয়স হলে সম্পূর্ণ ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই ভায়া পরীক্ষা করা উচিত। ভায়া পরীক্ষার মাধ্যমে একজন নারীর জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে কি না, তা ১০ বছর আগে শনাক্ত করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে দ্রুত চিকিৎসায় জরায়ুমুখ ক্যানসার থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকদের সংগঠন অবসটেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জরায়ুমুখ ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের ভোগান্তি ভয়াবহ। এইচপিভি টিকা নিরাপদ এবং এ টিকার মাধ্যমে ভবিষ্যতে জরায়ুমুখ ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে বলে প্রমাণিত। তাই ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী বা এর বেশি বয়সী কিশোরীদের এ টিকা দেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন।’ বিবাহিত কিশোরীরাও যে এইচপিভি নিতে পারবে, সে সম্পর্কেও সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।অ

আরও পড়ুন পলিথিন ব্যাগমুক্ত বাজারকে পুরস্কার দেওয়া হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *