সাম্প্রতিক শতকগুলোতে বিশ্বের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশগুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহল আছে। ‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’ বিশ্বে জনসংখ্যা নিয়ে কাজ করে এমন স্বাধীন অলাভজনক সংস্থা বিশ্বের জনসংখ্যার লাইভ (তাৎক্ষণিক) নিজেদের ওয়েবসাইটে তথ্য প্রচার-প্রকাশ করে।
ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের তথ্য অনুসারে, জনসংখ্যায় বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা দেওয়া
১. ভারত (India)
জনসংখ্যা: দেশটির জনসংখ্যা ১৪৫ কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার প্রায়।
ভারত দক্ষিণ এশিয়ার একটি বৃহৎ দেশ এবং বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল রাষ্ট্র। দেশটির ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ধর্মের বৈচিত্র্য অত্যন্ত প্রভাবশালী। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারত শিল্প, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। দেশের জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার এখনও তুলনামূলকভাবে বেশি, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ হার ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। জনসংখ্যার এমন বৃদ্ধি ভারতের অর্থনীতি, পরিবেশ, ও সামাজিক ক্ষেত্রগুলোর ওপর বিশাল প্রভাব ফেলেছে।
2. চীন (China)
জনসংখ্যা: দেশটির ১৪১ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার জনসংখ্যা।
জনসংখ্যায় বিশ্বে চীনের অবস্থান দ্বিতীয়। এটি পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত এবং বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দেশটির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের জন্মহার হ্রাস পাচ্ছে এবং দেশটি এক সন্তান নীতি থেকে দুই সন্তান নীতিতে পরিণত হয়েছে, তারপরেও এটি বিশ্বে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। তবে ২০২৪ সাল নাগাদ ভারতের সঙ্গে চীনের জনসংখ্যা সমান বা ভারতের শীর্ষে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৩. যুক্তরাষ্ট্র (United States)
জনসংখ্যা: জনসংখ্যা ৩৪ কোটি ৫৪ লাখ ২৭ হাজার।
তৃতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে জনবহুল এবং বিশ্বের তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। এটি অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান দেশ। এখানে অভিবাসনের হার অত্যন্ত বেশি, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক সুযোগ দেশটিকে অভিবাসীদের আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
৪. ইন্দোনেশিয়া (Indonesia)
জনসংখ্যা: দেশটির জনসংখ্যা ২৮ কোটি ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার।
ইন্দোনেশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় দ্বীপরাষ্ট্র এবং বিশ্বের চতুর্থ জনবহুল দেশ। দেশটির জনগোষ্ঠী বেশ বৈচিত্র্যময় এবং এতে রয়েছে ১৭,০০০-এরও বেশি দ্বীপ। ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি ক্রমশ উন্নতি করছে, তবে দেশের কিছু অংশে এখনও দরিদ্রতা বিরাজমান। তবুও ইন্দোনেশিয়ার যুবসমাজ এবং সংস্কৃতি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
৫. পাকিস্তান (Pakistan)
জনসংখ্যা: দেশটির ২৫ কোটি ১২ লাখ ৬৯ হাজার জনসংখ্যা ।
দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত পাকিস্তান বিশ্বের পঞ্চম সর্বাধিক জনবহুল দেশ। দেশটির অর্থনীতি, সামাজিক ব্যবস্থা, এবং রাজনৈতিক পরিবেশ বিশেষত ইসলামিক সংস্কৃতির সাথে জড়িত। পাকিস্তানের জনসংখ্যা বৃদ্ধি অত্যন্ত দ্রুত, যা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে চাপ সৃষ্টি করছে। শহুরে এলাকায় উন্নয়ন এবং গ্রামীণ এলাকায় দরিদ্রতার মধ্যে বড় একটি ফারাক রয়েছে।
৬. নাইজেরিয়া (Nigeria)
জনসংখ্যা: দেশটির জনসংখ্যা ২৩ কোটি ২৬ লাখ ৭৯ হাজার।
জনসংখ্যায় নাইজেরিয়ার অবস্থান বিশ্বে ষষ্ঠ ও আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল। পশ্চিম আফ্রিকায় অবস্থিত এই দেশটি বিভিন্ন জাতিগত এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জন্য বিখ্যাত। তেল-সমৃদ্ধ এই দেশটি আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতি হলেও, দেশটিতে দরিদ্রতা, দুর্নীতি এবং বিদ্রোহীদের হুমকি রয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ, কারণ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল এখনও অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত।
৭. ব্রাজিল (Brazil)
জনসংখ্যা: দেশটির জনসংখ্যা ২১ কোটি ১৯ লাখ ৯৯ হাজার।
দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে জনবহুল দেশ হলো ব্রাজিল। এটি বিশ্বের নবম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং এর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। ব্রাজিলের জনসংখ্যা মূলত শহুরে এলাকায় কেন্দ্রীভূত, বিশেষ করে সাও পাওলো, রিও ডি জেনেইরো এবং ব্রাসিলিয়াতে। যদিও ব্রাজিলের জন্মহার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমেছে, তবুও এর জনসংখ্যা বিশাল এবং দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বড় প্রভাব রাখছে।
৮. বাংলাদেশ (Bangladesh)
জনসংখ্যা: জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬২ হাজার।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত এবং বিশ্বের অষ্টম সর্বাধিক জনবহুল দেশ। দেশটি বেশ ঘনবসতিপূর্ণ এবং প্রতিটি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১,২৬৫ জন মানুষ বাস করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ কৃষি, শিল্প ও সেবা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছে। দেশটির অর্থনীতি উন্নয়নের পথে রয়েছে, তবে জনসংখ্যার চাপে পরিবেশ ও অবকাঠামো সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
৯. রাশিয়া (Russia)
জনসংখ্যা: দেশটির ১৪ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার জনসংখ্যা ।
রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম ভৌগোলিক দেশ, তবে এর জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। নবম অবস্থানে আছে রাশিয়া। ইউরোপ এবং এশিয়ার মাঝে অবস্থিত এই দেশটির জনসংখ্যা ঘনত্ব মূলত শহুরে এলাকায় বেশি। রাশিয়ার জন্মহার কম এবং দেশটি জনসংখ্যা হ্রাসের সম্মুখীন হচ্ছে। তবে এর বিশাল ভূখণ্ড এবং প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে এটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
১০. ইথিওপিয়া (Ethiopia)
জনসংখ্যা: দেশটির জনসংখ্যা ১৩ কোটি ২০ লাখ ৬০ হাজার।
জনসংখ্যায় ইথিওপিয়ার অবস্থান দশম। দেশটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং অর্থনীতির জন্য সুপরিচিত। ইথিওপিয়ার জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে না, তবে দেশের অর্থনীতি এবং শিল্প খাতের উন্নতি দেশটিকে আফ্রিকার অন্যতম প্রধান দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কৃষি, পর্যটন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জনসংখ্যার প্রভাব এবং ভবিষ্যত
উপরে বর্ণিত দেশগুলোর জনসংখ্যা তাদের আর্থ-সামাজিক কাঠামো এবং বৈশ্বিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। জনবহুল দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো, পরিবেশের ভারসাম্য এবং সামাজিক সেবা প্রদান করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
বিশ্বের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়লেও বিভিন্ন অঞ্চলে এর হার ভিন্ন হতে পারে। যেমন উন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি কম, কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ভবিষ্যতে জনসংখ্যার চাপ এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে।
আরও পড়ুন ড. ইউনূস প্রভাবশালী বিশ্ব মুসলিমের তালিকায়