ভারতের বিপক্ষে চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর এই ফরমেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা সাইলেন কিলার। টি-টোয়েন্টিতে ক্রিকেটে বাংলাদেশের অভিষেক ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর। খুলনায় সেই ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। ওই ম্যাচের ৯ মাস পর ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই সংস্করণে দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলে বাংলাদেশ। সেদিন অভিষেক হয় মাহমুদউল্লাহ নামের এক অলরাউন্ডারের। নাইরোবিতে প্রতিপক্ষ ছিল কেনিয়া। ওই ম্যাচের ১৭ বছর ৩৭ দিন পর আজ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ৩৯ বছর বয়সী ক্রিকেটার। এর আগে ২০২১ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে হঠাত অবসরের ঘোষণা দেয়। বর্তমানে শুধু একদিনের ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন।
বিদায় বেলায় ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তৃতীয় দীর্ঘতম ক্যারিয়ারের মালিক মাহমুদউল্লাহ বিদায় নিচ্ছেন অনেকগুলো রেকর্ড সঙ্গী করে। এই সাইলেন কিলার ক্রিকেটের তিন ফরমেট মিলে এমন একটা রেকর্ড সঙ্গে নিয়ে অবসর নিচ্ছে যা সব ফরমেট মিলিয়ে বর্তমানে আর কারও নেই।
সবচেয়ে বেশি বার হ্যাটট্রিকে মাহমুদউল্লাহ
বাংলাদেশের অনেক ম্যাচ জেতানোর নায়ক যেমন, আবার অনেকবার ভরাডুবি থেকে বাঁচানোর নায়কও মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ক্রিকেট কখনো কখনো খুব নির্মম হয়ে ওঠে। ভালো ব্যাটসম্যানদেরও ভাগ্যের প্যাচে নিয়ে ফেলে দুর্ভাগাদের পাশে। হ্যাটট্রিকের অংশ হওয়ার ক্ষেত্রে মাহমুদউল্লাহ সেসব দুর্ভাগাদেরই একজন। বলা ভালো, মাহমুদউল্লাহই সবচেয়ে দুর্ভাগা। ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে মাহমুদউল্লাহই যে সবচেয়ে বেশিবার হ্যাটট্রিকের অংশ হয়েছেন! সেটি কতবার তা শুরুতেই বলা হয়েছে। এবার পেছন ফিরে তাকানো যাক।
ওয়ানডে হ্যাটট্রিকে দুইবার
২০১৫ সালে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মাহমুদউল্লাহর এই দুর্ভাগ্যের শুরু।
সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা অভিষিক্ত প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদার টানা তৃতীয় শিকার ছিলেন রিয়াদ। চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে তামিম ইকবাল ও পঞ্চম বলে লিটনকে আউট করার পর মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন ওভারে শেষ বলে।
তিন বছর পর ২০১৮ সালে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবারও একই দুভার্গ্যের শিকার হন মাহমুদউল্লাহ। লঙ্কান পেসার দিলশান মাদুশঙ্কার তুলে নেওয়া হ্যাটট্রিকে শেষ উইকেটটি ছিলেন তিনি। ৪০তম ওভারের শেষ দুই বলে মাশরাফি বিন মর্তুজা ও রুবেল হোসেনকে তুলে নেওয়ার পর ৪২তম ওভারের প্রথম বলে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ আউট করেন মাদুশঙ্কা।
টেস্ট হ্যাটট্রিকে একবার
ওয়ানডেতে দুবার হ্যাটট্রিকের অংশ হওয়ার পর টেস্টে একই দুর্ভাগ্যের শিকার হন মাহমুদউল্লাহ। ২০২০ সালে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানি পেসার নাসিম শাহর হ্যাটট্রিকে শেষ উইকেটটি ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। ওয়ানডে ও টেস্টে তিনবার হ্যাটট্রিকের অংশ হওয়ার পথে প্রতিবারই শেষ উইকেট ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিকে তিন বার
টি–টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিকের অংশ হওয়ার শুরুতে অবশ্য তাঁর উল্টো অভিজ্ঞতা হয়েছে। ২০২১ সালে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে তৃতীয় ম্যাচে ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার নাথান এলিস। এর মধ্যে প্রথম উইকেটটি ছিল মাহমুদউল্লাহর। তিনি বোল্ড হন।
এ বছর একই সংস্করণে দুবার হ্যাটট্রিকের অংশ হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। গত মার্চে সিলেটে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন শ্রীলঙ্কার পেসার নুয়ান তুষারা। এবার অবশ্য আগের ধারাতেই ফিরতে হয় মাহমুদউল্লাহকে। চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে নাজমুল হোসেন, তৃতীয় বলে তাওহিদ হৃদয়কে তুলে নেওয়ার পর চতুর্থ বলে মাহমুদউল্লাহকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন তুষারা।
সে পর্যন্ত মোট পাঁচবার হ্যাটট্রিকের অংশ হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তাতেই অবশ্য রেকর্ডটি আগেই গড়া হয়ে গিয়েছিল। তিন সংস্করণ মিলিয়ে আর কোনো ব্যাটসম্যান যে তিনবারের বেশি হ্যাটট্রিকের অংশ হননি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস,ছয়বারের মতো হ্যাটট্রিকের অংশ হতে হলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কে।
সর্বশেষ ষষ্ঠ হ্যাটট্রিকের স্বীকার হয় অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে, অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স হ্যাটট্রিক করেন ১৮তম ওভারের শেষ দুই বল ও ২০তম ওভারের প্রথম বলে উইকেট নেন কামিন্স, যা এবার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক।
কামিন্সের টানা তিন বলে উইকেট নেওয়ার পথে প্রথম শিকার মাহমুদউল্লাহ। ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে কামিন্সের অফ স্টাম্পের বাইরের খাটো লেংথের ডেলিভারি পুল করতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে নেন মাহমুদউল্লাহ। বোল্ড! কামিন্সের পরের দুটি বলে মেহেদী হাসান ও তাওহিদ হৃদয়ও আউট হন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ নিয়ে ষষ্ঠবার হ্যাটট্রিকের অংশ হলেন মাহমুদউল্লাহ। আর কোনো ব্যাটসম্যানকেই এমন দুর্ভাগ্যের মুখোমুখি হতে হয়নি। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহই সবচেয়ে বেশিবার হ্যাটট্রিকের অংশ হলেন—টি–টোয়েন্টিতে তিনবার, ওয়ানডেতে দুবার ও টেস্টে একবার।
ভারতের বিপক্ষে চলমান সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ যদি খেলেন,আবার যদি হ্যাতট্রিকে ফাদে পড়েন তাহলে আরও বাড়তে পারে।কিন্ত অবশ্য আর চাইবেনা এরকম রেকর্ডের মালিক হতে। শেষটাকে নিশ্চয়ই ভালো কোন ব্যক্তিগত বা দলীয় কোন রেকর্ড গড়বেন স্মরণীয় করে রাখার প্রতিজ্ঞা নিয়েই ব্যাটিং করতে নামবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা খেলোয়াড়।
1 thought on “মাহমুদউল্লাহর হ্যাটট্রিকে বিশ্ব রেকর্ড”