* অংশ নেন অন্তত ১৫ জন
* সরানো হলো হল প্রাধ্যক্ষকে
* নতুন হল প্রাধ্যক্ষক নিয়োগ
গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের অতিথিকক্ষে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেনকে (৩২) তিন দফায় পিটিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে এই ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ছয় শিক্ষার্থী। রাজধানীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেল থেকে এই ছয় শিক্ষার্থীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে রাত ৯টার দিকে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্টসূত্র গুলো বলছে, ছয় শিক্ষার্থীর জবানবন্দি অনুযায়ী তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন ১৫ থেকে ২০ জন। তাঁরা সবার নাম প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, চোর সন্দেহে তিন দফায় তোফাজ্জলকে মারধর করা হয়। আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়া ছয় শিক্ষার্থী হলেন, মো. জালাল মিয়া, সুমন মিয়া, মো. মোত্তাকিন সাকিন, আল হুসাইন সাজ্জাদ, আহসানউল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম। এরা সবাই ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ছয় শিক্ষার্থীর সবাই বলেছেন, ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ছাত্রদের ছয়টি মুঠোফোন ও মানিব্যাগ চুরি হয়েছিল। তোফাজ্জল সেদিন রাত আটটার দিকে হলের ফটক দিয়ে মাঠের ভেতরে যান। তখন কয়েকজন শিক্ষার্থী চোর সন্দেহে তাঁকে আটক করে হলের অতিথিকক্ষে নিয়ে যান। পরে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাঁকে স্টাম্প দিয়ে মারধর করা হয়। এরপর তাঁকে হলের ক্যানটিনে নিয়ে রাতের খাবার খাওয়ানো হয়। খাওয়া শেষে আবার তাঁকে হলের অতিথিকক্ষে এনে ব্যাপক মারধর করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী।
মার খেতে খেতে যখন তোফাজ্জল অচেতন হয়ে পড়লেন, তখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁকে হাসপাতালে না নিয়ে থানায় নিয়ে গেল। থানা থেকে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই সব শেষ। তবে হলের শিক্ষার্থীরা শুধু তোফাজ্জলকে মেরেই শান্ত হননি, এক পর্যায়ে তোফাজ্জলের ফুফাতো বোন আসমা আক্তার তানিয়াকে ফোন দিয়ে জানায়, ‘তার ভাই চুরি করতে এসে ধরা পড়েছেন, ৩৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’ তখন আসমা আক্তার তাঁদের অনুরোধ করে বলেন, ‘তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন, তাঁকে আপনারা মাইরেন না। সন্দেহ হলে থানা-পুলিশের কাছে দিয়ে দিন।’ আসমা থাকেন পিরোজপুরে।
তিন ধাপে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে মারধরে জড়িত। জবানবন্দিতে ওই ছয় শিক্ষার্থী তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবার নাম প্রকাশ করেছেন। আসামিরা বলেন, সেদিন অতিথিকক্ষে মারধরের পর রাত ১২টার দিকে হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে তাঁরা জানতে পারেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তোফাজ্জল মারা গেছেন।
৮ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল ফজলুল হক হল থেকে ছয় শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে (এফ এইচ হল) চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর হল প্রাধ্যক্ষ শাহ্ মো. মাসুমকে সরিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি হল প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিতে শনাক্ত হওয়া আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ওই আট শিক্ষার্থীর হলের আসনও বাতিল করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ।
এদিকে, এফ এইচ হলের প্রাধ্যক্ষকে সরিয়ে তাঁর স্থলে অধ্যাপক মো. ইলিয়াস আল-মামুনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক মো, ইলিয়াস আল-মামুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে তদন্ত কমিটি হবে। অধিকতর তদন্ত করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গতকাল শুক্রবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যাকান্ডে জড়িত আটজনের মধ্যে ছয়জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।গত বুধবার রাতে এফ এইচ হলের অতিথিকক্ষে স্টাম্প দিয়ে দফায় দফায় পিটিয়ে হত্যা করা হয় তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে। ঘটনার পরদিন সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। সেদিন রাত ১১টায় কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই মামলায় বৃহস্পতিবারই প্রক্টরিয়াল টিমের সহযোগিতায় এফ এইচ হলের ছয় ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
শনাক্ত আটজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এফ এইচ হলের আবাসিক ছাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. জালাল মিয়া, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মো. মোত্তাকিন সাকিন শাহ,ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আল হোসাইন সাজ্জাদ,উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মো. ফিরোজ কবির, মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সুমন মিয়া, গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. আহসান উল্লাহ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মো. আবদুস সামাদ এবং সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ওয়াজিবুল আলম। তাঁদের মধ্যে ফিরোজ কবির ও আবদুস সামাদ ছাড়া অন্য ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
1 thought on “তোফাজ্জলকে তিন দফায় পিটিয়ে হত্যা”