পুরুষের নিম্নাঙ্গে গরম কালে নানা স্থানে বিভিন্ন ধরনের তীব্র চুলকানির আবির্ভাব হয়। পরিবারের সবার সামনে,সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে, কর্মক্ষেত্রে, এমনটা যখন ঘটে, তখন পুরুষদের অত্যন্ত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এমন গোপনাঙ্গে চুলকানির কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ছাড়া আরও যেসব কারণ এ জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়, তা হলো ছত্রাকের আক্রমণ ও ট্রাইকোমোনিয়াসিস–জাতীয় পরজীবী বা প্যারাসাইটের আক্রমণ। এ ছাড়া মাইকোপ্লাজমা জেনেটালিয়ামের সংক্রমণ, খোসপাঁচড়া, যৌনাঙ্গে উকুন হলেও চুলকানি হতে পারে। এছাড়া নানা ধরনের যৌনরোগ যেমন, গনোরিয়া, সিফিলিস,এইডস ইত্যাদির কারণেও গোপণাঙ্গে চুলকানি হতে পারে।এই সব রোগের কারণে অনেক মহিলাদেরও চুলকানি হয়।
গোপনাঙ্গে চুলকানির সম্ভাব্য কারণ:
ছত্রাক সংক্রমণ (ইয়িস্ট ইনফেকশন): বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি সাধারণ। ছত্রাক সংক্রমণে যোনি বা পুরুষের গোপনাঙ্গে চুলকানি, জ্বালা, ও সাদাটে স্রাব দেখা যায়।
ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস): বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। এতে চুলকানি ছাড়াও, দুর্গন্ধ এবং ফ্যাকাসে স্রাব হতে পারে।
যৌন সংক্রমিত রোগ (STDs): যেমন, হার্পিস, গনোরিয়া, সিফিলিস ইত্যাদি রোগ গোপনাঙ্গে চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে।
অ্যালার্জি বা চুলকানি প্রতিক্রিয়া: সাবান, লোশন, স্যানিটারি পণ্য, বা নিম্নমানের অন্তর্বাসে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের প্রতি অ্যালার্জি চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে।
ত্বকের অবস্থা (ডার্মাটাইটিস): সংবেদনশীল ত্বকে বিভিন্ন কারণে প্রদাহ বা ত্বকের সমস্যা হতে পারে, যা চুলকানি সৃষ্টি করে।
শারীরিক বিভিন্ন রোগ ঃ ডায়াবেটিস, কিডনিরোগ, একজিমা ও রক্তের অন্যান্য রোগ থাকলেও যৌনাঙ্গে চুলকানি হয়।
পোষাক ঃ আঁটো পোশাক পরলে অথবা ওই স্থান যদি সব সময় আর্দ্র থাকে, তবে এসব সমস্যা বেশি হয়। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার অভাবও এ জন্য দায়ী।
ইনগ্রাউন হেয়ার (চুলের শিকড়): শেভ করার পরে চুলের শিকড় ভেতরে ঢুকে গেলে তা চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে।
ঘাম বা অপরিষ্কারতা: দীর্ঘ সময় ধরে ঘাম বা অপরিষ্কার থাকার কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মাতে পারে, যা চুলকানি সৃষ্টি করে।
বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ,ঃ যেমন কোনো কোনো ডিটারজেন্ট, কেমিক্যাল, সুগন্ধিযুক্ত সাবান, রংওয়ালা টিস্যু পেপার, ফেমিনিন হাইজেনিক স্প্রে, ডুশ ইত্যাদি ব্যবহারে অ্যালার্জি হওয়ার কারণেও চুলকানি হতে পারে।
প্রতিকার
ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিফাঙ্গাল বা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ লাগানো বা খাওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। কারণ নির্ণয় করে সে অনুযায়ী সমাধান করতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়
সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। রঙিন ও বেশি সুগন্ধিযুক্ত টয়লেট টিস্যু ও সাবান ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজন ছাড়া ফেমিনিন হাইজিন স্প্রে ও ডুশ ব্যবহার করবেন না। ভেজা কাপড় পরে বেশিক্ষণ থাকবেন না। ঘেমে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভেজা অন্তর্বাস পাল্টে নেবেন। সুইমিংপুলে সাঁতার কাটলে ক্লোরিনের কারণেও চুলকানি হতে পারে। তাই পুল থেকে উঠে ভালো করে গোসল করতে হবে। সব সময় সুতির কাপড় দিয়ে তৈরি অন্তর্বাস পরুন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ওজন কমান। নিয়মিত গোসল করুন। অন্তর্বাস নিয়মিত রোদে শুকাতে হবে, যাতে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত হয়। এছাড়া যদি চুলকানি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যৌন সংক্রমণজনিত রোগের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
চুলকানি সাধারণ সমস্যার মধ্যে একটি হলেও এর চিকিৎসা এবং প্রতিকার নির্ভর করে কারণের ওপর। অতএব, কারণ নির্ধারণ করে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। যাঁরা এ সমস্যায় প্রতিনিয়ত ভোগেন, তাঁদের অবশ্যই চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে।