সন্তানদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তুলতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, ‘যে আপনাদের কথা শুনবে, আপনাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে, তাকেই আগামী সংসদে আপনার প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করবেন। একটা জিনিস মনে রাখবেন, দল আর মার্কা দেখার সময় শেষ, এখন সময় যোগ্যতা দেখার।’
গতকাল শুক্রবার বিকেলে পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ মাঠের বটতলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সারজিস আলম এসব কথা বলেন।
৮ সেপ্টেম্বর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সঙ্গে জেলায় জেলায় মতবিনিময় সভা শুরু হয়েছে। ‘গণ-অভ্যুত্থানের প্রেরণায় শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভা’ শিরোনামে গতকাল পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, লক্ষ্মীপুর ও ময়মনসিংহে সভার আয়োজন করা হয়। অবশ্য স্থানীয় সমন্বয়কদের বিরোধিতার মুখে ময়মনসিংহের মতবিনিময় সভাটি হয়নি।
পঞ্চগড়ের সভায় সারজিস আলম বলেন, ‘পঞ্চগড় বাংলাদেশের সর্ব-উত্তরের একটি সীমান্তবর্তী একটি জেলা। এই পঞ্চগড়ের ভাইয়েরা বিভিন্ন কাজে ভারতের সীমান্তে যাওয়ার অনেক দূর থেকেই বিএসএফের গুলিতে মরতে হয়। এই জেলার মানুষ কি নিজের দেশের ভূমিতে গুলি খাওয়ার জন্যই জন্মগ্রহণ করেছে? এর প্রতিটি গুলির বিচার ওই ফ্যাসিস্ট হাসিনা করতে পারেনি। আমরা পঞ্চগড়ের মানুষ স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, ওই খুনি হাসিনা থেকে শুরু করে যারা এই বিচারগুলো করতে দেয়নি, যারা ভারতের সেবাদাস হিসেবে ছিল, তাদের বিচার করতে হবে।’
সারজিস আলম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ আরও বলেন, ‘যদি আজকের পর থেকে পঞ্চগড় নিয়ে কোনো বৈষম্য হয়, তাহলে বাংলাদেশ,ভুটান, নেপাল,ভারত এই চার দেশের যে সীমান্ত,যে গলা, যে নিশ্বাস,যে হৃৎপিণ্ড, সেই চার দেশের হৃৎপিণ্ড তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা আমরা রিচজীবনের জন্য বন্ধ করে দেব।’
মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম, রাকিব রানা মাসুদ, আবু সাইদ লিয়ন, মিশু আলী সুহাস, সহসমন্বয়ক জহির রায়হান প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভায় পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী, মখলেছার রহমান, মোকাদ্দেসুর রহমান সান,হাবিবুর রহমান শাওন,খোরশেদ মাহমুদসহ পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনতা উপস্থিত ছিলেন। সকালে এর আগে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভবনে মতবিনিময় করেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা।
‘রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে’
জয়পুরহাটে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। গতকাল দুপুরে আয়োজিত সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, অবশ্যই রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। যদি রাষ্ট্র সংস্কার না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরাও ডিক্টেটর (স্বৈরশাসক) হয়ে যেতে পারেন। এই জায়গাগুলো ঠিক করে দেওয়া উচিত। প্রয়োজনে সংবিধান পুনর্লিখন করা দরকার।
মাহিন সরকার বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের মিডিয়াগুলো করপোরেট হাউস-নিয়ন্ত্রিত,স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকারকে সহযোগিতা করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খবর এসব মিডিয়া ঠিকভাবে প্রচার করেনি। আন্দোলনকারীদের পুলিশ যখন গুলি করে মারছিল, তখনও এই সব মিডিয়া প্রচার করেছে দেশের সিচুয়েশন নরমাল (পরিস্থিতি স্বাভাবিক) আছে।’
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সমন্বয়ক কুররাতুল আইন কানিজ, সাইফুল ইসলাম, ইফতেখার আলম, আবদুল্লাহ আল মামুন, ফয়সাল আহমেদ, ফাতিন মাহতি, সাদিকুল ইসলাম, ঐশিক মণ্ডল ও ইমাম হুসাইন। বিকেলে সমন্বয়কেরা শহীদ নজিবুল সরকার বিশালের বাড়ি পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামে যান এবং তাঁর কবর জিয়ারত করেন। বিকেল চারটায় সেখান থেকে ফিরে শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানে আরেকটি মতবিনিময় সভায় যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ।
গতকাল বিকেলে লক্ষ্মীপুর শহরের লিল্লাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে ছাত্র-নাগরিকদের মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদির বলেন, ‘যারা বিগত দিনে হামলা, মামলা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতে করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য একটাই, নতুন বাংলাদেশ গড়ার। সেই বাংলাদেশ গড়ার অগ্রণী হাতিয়ার আপনারা, তরুণেরাই।’ মতবিনিময় সভায় কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হামজা মাহবুব, জিয়া উদ্দিন আয়ান, সুমাইয়া আক্তার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মতবিনিময় সভা স্থগিত
ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়কদের বিরোধিতার পর ছাত্র-জনতার মতবিনিময় সভা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল নগরের সার্কিট হাউস ময়দানে বেলা তিনটায় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এতে ঢাকা থেকে আসা কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
ওই আয়োজন ঘিরে ঢাকা থেকে আসা সমন্বয়কদের সঙ্গে স্থানীয় সমন্বয়কদের বিরোধ দেখা দেয়। স্থানীয় সমন্বয়কদের একটি দল গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে ওই মতবিনিময় সভায় যোগ না দিতে সাধারণ ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানায়।
ঢাকা থেকে আসা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের জানান , ‘চলমান পরিস্থিতিতে আজকের (শুক্রবার) মতবিনিময় সভা স্থগিত করা হয়েছে।’