সদ্য বিদায়ী আওয়ামী সরকার একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। ব্যপক দুর্নীতি ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে আওয়ামীলীগ সরকার দেশে কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করে। বাস্তবায়নের পাশাপাশি এইসব মেগা প্রকল্প থেকে শেখ হাসিনা সরকার সীমাহীন দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাত করে। ২০১৯ সালে কোভিড-১৯ মহামারির ভয়াবহ সংকটকালে আওয়ামী সরকার ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে সাতটি মেগাপ্রকল্প বরাদ্দ পেয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। এই ৭টি প্রকল্পের মোট বরাদ্দ ছিল বাজেটের ৬%।
মেগাপ্রকল্প
“মেগাপ্রকল্প” বলতে বোঝানো হয় বিশাল আকারের উন্নয়ন প্রকল্প বা ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল প্রকল্প, যা সাধারণত অনেক বড় অর্থায়ন, জটিল প্রকৌশল, এবং দীর্ঘমেয়াদি কাজের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই ধরনের প্রকল্পগুলো সাধারণত একটি দেশের অর্থনীতি, পরিবহন, শক্তি, স্বাস্থ্যসেবা বা সামাজিক কাঠামোর উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত হয়।
উদাহরণ হিসেবে, বড় বড় সেতু, বিমানবন্দর, বাঁধ, হাইওয়ে, মেট্রো রেল ব্যবস্থা, এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি মেগাপ্রকল্প হিসেবে গণ্য হয়। বাংলাদেশের পদ্মা সেতু এবং মেট্রোরেল প্রকল্প দুটি উল্লেখযোগ্য মেগাপ্রকল্প। এগুলো দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক ও প্রযুক্তিগত বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে বিশাল ভূমিকা পালন করে।
এই সাতটি প্রকল্প হলো:
ক. রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
খ. পদ্মা সেতু
গ. মেট্রোরেল
ঘ. পদ্মাসেতুর রেল লিংক
ঙ. মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র
চ. পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর
ছ. বঙ্গবন্ধু টানেল
মেগা প্রকল্পে মেগা বাজেট
এছাড়া আরও দশটি মেগাপ্রকল্প বাজেটের ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯% বরাদ্দ পেয়েছিল । বলাই বাহুল্য, উভয় প্রকল্পের ব্যয়ই অত্যন্ত বেশি। একটা পর্যায়ে বাংলাদেশের বাজেটের একটি বড় অংশ যাচ্ছিল এই দুইটি প্রকল্পের ব্যয় বহনের পেছনে। অর্থাৎ, এই ব্যয় জনগণকেই বহন করতে হয়েছে ও হচ্ছে। তাই এই ব্যয় কতটুকু যৌক্তিক, তা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে।
পদ্মা সেতু
সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের পদ্মা সেতু ছিল দর্পের প্রতীক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “প্যাশন” প্রকল্প।
পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ছিল ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী ৩০,১৯৩.৩৯ কোটি টাকা। এই খরচ ছিল প্রাক্বলিত খরচের তিন গুণের বেশি। খরচের হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সেতুর তালিকায় দশম ছিল পদ্মা সেতু। পদ্মা নদী অত্যন্ত খরস্রোতা। পাশাপাশি, সেতুটি বহুমুখী সেতু — তাই এত খরচ পড়েছে বলে দাবি করা যেতে পারে। কিন্তু আসল চিত্র দেখতে বিশ্বের অন্যত্র তাকাতে হবে।
মুম্বাইয়ের সী-লিংক সেতু নদী নয়, সমুদ্রের উপর নির্মিত হয়েছে। এই সেতুর মোট খরচ ২০১০ সালে পড়েছিল ১৬ বিলিয়ন রুপি। মুদ্রাস্ফীতি হিসাব করলে তা আজকের দিনে দাঁড়াবে ৩৮ বিলিয়ন রুপি, যা ৪৮৮.৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ, পদ্মা সেতুর ব্যয় এর সাত গুণ।
আসামের বগিবিল সেতু ব্রক্ষ্মপুত্র নদীর উপর বানানো হয় ২০১৮ সালে। স্টিল-কংক্রিট ওয়েল্ডেড বিম ভারতে প্রথম ব্যবহৃত হয় এই সেতুতে, যাকে ভূমিকম্প-প্রতিরোধক বলা হয়। পানি নির্গমনের দিক থেকে আসামে ব্রহ্মপুত্র আর মাওয়ায় পদ্মা প্রায় কাছাকাছি।
অথচ, এই সেতুর খরচ মাত্র ৭৮০ মিলিয়ন ডলার। বগিবিল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৯৪ কিলোমিটার, পদ্মা সেতুর চাইতে সামান্য কম। দৈর্ঘ্য হিসাবে ধরলে একই উপাদানে বানানো বগিবিলের খরচ পড়ে ৯৭১ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ পদ্মা সেতুর চারভাগের একভাগ প্রায়।
রাশিয়ার কার্চ প্রণালী সেতু বিশ্বের নবম ব্যয়বহুল সেতু, এই কার্চ সেতু পদ্মা সেতুর মতোই বহুমুখী সেতু। ক্রিমিয়ার কের্চ পেনিনসুলা আর রাশিয়ার ক্রাসনোডরের তামান পেনিনসুলা কে সংযুক্ত করে নির্মিত হয়েছে এই সেতু। উত্তাল সাগরের উপর দিয়ে বানানো এই সেতু প্রায় একইরকম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই বানানো হয়েছে বলে ধরা যায়। এই সেতুর দৈর্ঘ্য ১৮ কিলোমিটার — পদ্মাসেতুর তিন গুণ। এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩.৭ বিলিয়ন ডলার।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচকরা দাবি করেন, পদ্মা সেতু নির্মানে অর্থের অপচয় ও দুর্নীতির উপাদান ছিল অনেক বেশি। এই বিপুল অর্থব্যয় বহনের জন্য এখন বসানো হচ্ছে উচ্চ হারের টোল। এই টোল জনগণের উপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
ঢাকা মেট্রোরেল
আরেকটি বিতর্কিত মেগাপ্রকল্প হলো ঢাকার মেট্রোরেল। ঢাকার উত্তরা থেকে মতিঝিল থেকে যাওয়া এমআরটি লাইন-৬ ঢাকার বুক চিরে চলে গেছে। এর জন্য নগরবাসীর কোটি কোটি কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। ঢাকাবাসীকে অসহনীয় যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে, এখনও হচ্ছে।
এই মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য বিশ কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটারের ব্যয় হয়েছে ১০৯৪ কোটি টাকা। ভারতে এই ব্যয় ৪১৫ কোটি থেকে ৫০০ কোটি টাকা। ভিয়েতনামের ১৩ কিলোমিটার লম্বা হ্যানয় লাইনের খরচ পড়েছে ৬০৮ কোটি টাকা। সিঙ্গাপুরে পড়েছে ৫৮৯ কোটি টাকা। হো চি মিন সিটি লাইন-১ এর খরচ পড়েছে ৮৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্প্রতিক কালে তৈরি হওয়া সবচেয়ে ব্যয়বহুল মেট্রো রেল লাইন হলো ঢাকা এমআরটি লাইন-৬।
এমআরটি লাইন-৬ নির্মানের পর আরো দুইটি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে। এই প্রস্তাবিত দুইটি লাইনের নির্মাণ ব্যয় বর্তমান লাইনের চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ — ১৮৩০ কোটি টাকা প্রতি কিলোমিটারের ব্যয়। এ প্রসঙ্গে সেই সময় এমআরটি লাইন-৬ এর প্রকল্প ডিরেক্টর মোহাম্মদ সায়েদুল হক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। এটি পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর এলাকায় অবস্থিত। এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ এবং এটি দেশের জ্বালানি খাতকে বৈচিত্র্যময় ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।
প্রকল্পের মূল অংশীদার হলো রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রোসাটম (Rosatom), যারা এই কেন্দ্রটির নকশা, প্রযুক্তি সরবরাহ এবং নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে, এবং এটি ২টি ইউনিট নিয়ে গঠিত। প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট, ফলে পুরো কেন্দ্রটির মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে ২৪০০ মেগাওয়াট।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট ব্যয় প্রায় ১২.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১,১৩,০৯২ কোটি টাকা) হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। এই প্রকল্পে অর্থায়নের একটি বড় অংশ রাশিয়া থেকে ঋণ হিসেবে সরবরাহ করা হচ্ছে। রাশিয়া বাংলাদেশের জন্য প্রায় ১১.৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ হিসেবে বরাদ্দ করেছে, যা ৯০% এর বেশি প্রকল্প ব্যয়ের অংশ।
এই ঋণের শর্তাবলীতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ রাশিয়াকে ১.৭৫% সুদসহ ২০ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করবে। প্রকল্পের বাকি খরচ বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যয় মূলত পরমাণু চুল্লি নির্মাণ, প্রযুক্তি স্থানান্তর, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বিনিয়োগের জন্য ব্যয়িত হচ্ছে।
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পটি কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি এলাকায় নির্মিত হচ্ছে। এই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩৫,৯৮৪ কোটি টাকা)।
প্রকল্পের অর্থায়নের একটি বড় অংশ জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা (JICA) থেকে আসছে। জাইকা এই প্রকল্পে প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ হিসেবে সরবরাহ করছে, যা প্রকল্পের মোট ব্যয়ের প্রায় ৮৫%। বাংলাদেশ সরকার বাকি প্রায় ১৫% খরচ বহন করছে।
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১২০০ মেগাওয়াট। এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ২টি ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প
পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত, যা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প। এই বন্দরটি নির্মাণের লক্ষ্য হলো দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক চাহিদা পূরণ করা এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের ওপর চাপ কমানো।
পায়রা বন্দরের প্রাথমিক নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১.৩৮ লাখ কোটি টাকা)। এই প্রকল্পটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে এবং বিভিন্ন স্তরে ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ গভীর সমুদ্রবন্দর।
এই প্রকল্পের অর্থায়ন প্রধানত বিদেশি ঋণ এবং বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে আসছে। চীনের কোম্পানিগুলি এবং অন্যান্য বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রকল্পে অংশগ্রহণ করছে, বিশেষ করে অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা প্রদান করছে।
বঙ্গবন্ধু টানেল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, যা কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রথম নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল। এটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দুই তীরকে সংযুক্ত করবে, এবং এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহর ও এর আশপাশের এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের মোট ব্যয় প্রায় ১০.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৯,৮৮০ কোটি টাকা) নির্ধারিত হয়েছে। এই প্রকল্পের মূল অর্থায়ন এসেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে, যা প্রকল্পের প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ করেছে।
টানেলটি প্রায় ৩.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ, এবং এতে দুটি টিউব রয়েছে, যার মাধ্যমে যানবাহন চলাচল করবে। এই প্রকল্পটি দেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অর্থনীতি ও শিল্পায়নকে আরও ত্বরান্বিত করবে এবং বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পদ্মাসেতু অথবা মেট্রোরেল বা অন্য মেগা প্রকল্প কোনোটিই পুরোপুরি নিজস্ব অর্থায়নে নয়। যেমন, পদ্মা সেতুকে রেলপথের সঙ্গে সংযোগ করার প্রকল্পের জন্য প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার — অর্থাৎ, প্রায় সেতু নির্মানের ব্যয়ের চেয়েও প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা বেশি — প্রয়োজন। আর এই অর্থের ৮৫% যোগান দিতে চীনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আবার ঢাকার মেট্রোরেলের অর্থায়নের ৭৩% এসেছে জাপানের জাইকার ঋণ থেকে। এসব প্রকল্পের এমন বিশাল ব্যয়ের ভার আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের নাগরিকদেরই বহন করতে হবে।