আন্দোলনের প্রাণ হলো স্লোগান। আর এই প্রাণের স্লোগান আগে থেকে ঠিক করা থাকে না। চলমান মিছিল ও সমাবেশ থেকে সুন্দর কিছু স্লোগান এর জন্ম হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতীক।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই আন্দোলনে নামে। আন্দোলনে নানান ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে বদল আসে স্লোগানে। এসব স্লোগান আন্দোলনকারীদের মধ্যে বারুদের মতো কাজ করে। জোগায় ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের প্রেরণা।
শুরুতে আন্দোলন অহিংসই ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চড়াও হলে ১৫ জুলাই আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। এরপর ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন প্রবল আন্দোলনের রূপ নেয়। বাড়তে থাকে সহিংসতা। শেষে সরকার পতনের এক দফা দাবি তুলে ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলন সফল হয়। ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের।
কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলেও সরকারের মারমূখী আচরণের ফলে একপর্যায়ে সরকার পতনের দাবি নিয়ে আন্দোলনের শেষ তিন সপ্তাহে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন স্লোগান। বদলেছে দাবির ভাষা,বদলেছে স্লোগানের ভাষাও। ।
‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’—এর মতো বারুদে শ্লোগান একপর্যায়ে রূপ নেয় সরকার পতনের এক দফা এক দাবিতে।যেমন বজ্রকঠিন কিছু স্লোগান ‘এক দুই তিন চার, শেখ হাসিনা গদি ছাড়’।এই শ্লোগানেই সারাদেশের ছাত্র-জন্তা ফুসে উঠে।
এছাড়া মাঝের তিন সপ্তাহে যে স্লোগানগুলো শোনা গিয়েছিল, সেখানে আছে ‘চাইলাম অধিকার হয়ে, হয়ে গেলাম রাজাকার’; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ এবং ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’-এর মতো আরও অনেক স্লোগান।
গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। যার ফলে আন্দোলনের গতি যেমন তীব্র হয়,তেমনি এসব স্লোগান তীব্র হয়ে ওঠে আবু সাঈদের মৃত্যুর পর। ছাত্র-জনতা মিছিল থেকেই স্লোগান শুরু হয়, ‘আমার খায়, আমার পরে, আমার বুকেই গুলি করে’; ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফিরিয়ে দে’; ‘বন্দুকের নলের সাথে ঝাঁজালো বুকের সংলাপ হয় না’ এবং ‘লাশের ভেতর জীবন দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’—এমন জ্বালাময়ী স্লোগান। এসব শ্লোগানের শব্দেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জনতার এই দাবির সঙ্গে আছে প্রাণ হারানোর যন্ত্রণা।
এরপর পরিস্থিতি যত বদলেছে, তত যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন স্লোগান। বর্তমান প্রজন্মের মুখে উঠে এসেছে আগের প্রজন্মের শব্দ-বাক্যও। যেমন ২ আগস্ট রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিয়েছিলেন, ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’; ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার’; ‘যে হাত গুলি করে, সে হাত ভেঙে দাও’ এবং ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’।
৩ আগস্ট ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ থেকে শোনা যায়, ‘আমার ভাই কবরে, খুনিরা কেন বাইরে’; ‘আমার ভাই জেলে কেন’ এবং ‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’—এসব স্লোগান।
সায়েন্স ল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে শোনা যায়, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’ এবং ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’—এর মতো স্লোগানগুলো।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আরও অনেকের মতো একাত্ম হয়েছিলেন রিকশাচালকেরা। ৩ আগস্ট দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’; ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’; ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ এবং ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়েছিলেন রিকশাচালকেরা।
১৫ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ স্লোগানটি আন্দোলনে নতুন গতি দিয়েছিল।
তবে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলে, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ স্লোগানটি। আর এসব স্লোগানের সঙ্গে সমান গতিতে লংমার্চ করেছে শব্দে লেখা স্লোগানগুলো। মানুষের হাতে হাতে ছিল সেসব।
মিছিলে প্ল্যাকার্ড, পোস্টার, ব্যানারে মানুষ লিখে নিয়ে এসেছিল কবিতার পঙ্ক্তি। সেখানে ছিল জহির রায়হান থেকে শুরু করে হেলাল হাফিজের লেখা কবিতা। উঠে এসেছিল কার্টুনে কার্টুনে ব্যঙ্গচিত্রও।
তবে স্লোগানের বিপরীতেও স্লোগান থাকে। থাকে প্রতিবাদের প্রতিবাদ। যেমন ১৭ জুলাই আন্দোলনকারীদের ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও উসকানিমূলক’ স্লোগানের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে ৪২৩ জন সাবেক ছাত্রনেতা বিবৃতি দিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা স্লোগান দেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’।
ছাত্র-জনতার মুখের স্লোগানগুলো শুধু মুখেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সেসব স্লোগান লেখা ছিল প্ল্যাকার্ডেও। ‘অনাস্থা অনাস্থা, স্বৈরতন্ত্রে অনাস্থা’; ‘চেয়ে দেখ এই চোখের আগুন, এই ফাগুনেই হবে দ্বিগুণ’; ‘তবে তাই হোক বেশ, জনগণই দেখে নিক এর শেষ’; ‘নিউটন বোমা বোঝো মানুষ বোঝো না‘আমরা আম-জনতা, কম বুঝি ক্ষমতা’; ‘তোমারে বধিবে যে গোকূলে বাড়িছে সে’; ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘হাল ছেড় না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড় জোরে’; ‘ফাইট ফর ইওর রাইটস’; এমন জ্বালাময়ী প্ল্যাকার্ডও ছিল হাতে হাতে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বলপ্রয়োগে অসংখ্য আন্দোলনকারীর প্রাণহানিতে পরিস্থিতি যত অবনতির দিকে যাচ্ছিল, ততই জোরালো হচ্ছিল স্লোগানের ভাষা।
গুলিতে শত শত মানুষের প্রাণহানির পর শেষ দিকে এসে শেখ হাসিনার পতনের এক দফা দাবিতে নানা স্লোগান শোনা যায়। এর মধ্যে ব্যাপক আলোচিত হয় আঞ্চলিক একটি স্লোগান, ‘আঁর ন হাঁইয়্যে, বৌতদিন হাঁইয়্য’ (আর খেয়ো না, অনেক দিন খেয়েছ)। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার এই স্লোগান শোনা গেছে ২ আগস্ট থেকে।
২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের, ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ের সাড়া জাগানো ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও, তবে তুমিই বাংলাদেশ’-স্লোগান সাক্ষী হয়ে আছে মানুষের দাবি আর আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে। শ্লোগান
শুধু আন্দোলনের আওয়াজ নয়, স্লোগানে স্লোগানে লেখা থাকে সমাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশের কথা।
আন্দোলনে -সংগ্রামে স্লোগান কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় আইন করে এই বাংলায় ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগান নিষিদ্ধ করেছিল ব্রিটিশরা। তাই বলা হয়ে থাকে আন্দোলন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার জন্য জ্বালামী বারুদে শ্লোগান দিতে হবে।আর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের জ্বলন্ত স্লোগানগুলোর মাধ্যমেই তারা স্বৈরাচারী সরকারকে হটিয়ে তাদের একদফা প্রাণের দাবি পূরণ করে।
kevin de bruyne world cup 2018 https://kevin-de-bruyne-az.com/ fulham fc manchester united kevin de bruyne az com .
player mohamed salah http://mohamed-salah-az.com/ barcelona kounde http://www.mohamed-salah-az.com .
Indowin99
I really like the blog site you created, and I admire it! It was absolutely amazing!
https://heylink.me/situsloginindowin99/
Great article! I really love the articles you write! Thank you so much.
Dr. P. L. Dhingra, an experienced ENT surgeon with over 50 years of practice, specializes in surgeries related to the ear, nose, throat, head, and neck. He practices at Indraprastha Apollo Hospital, Delhi, and has authored several books on ENT. You can learn more about Dr. P. L. Dhingra at EdhaCare.
It’s always refreshing to come across content that makes me think critically about things. Thanks!