৬ মাস গণ-অভ্যুত্থানের: সাবেক মন্ত্রী, এমপি

৬ মাস গণ-অভ্যুত্থানের: সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলারা গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ
Spread the love

৫ই আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর গত ১৩ আগস্ট প্রথম গ্রেপ্তার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। আর ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে প্রথম হত্যা মামলা হয়। গণ-অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও হাসিনা সরকারের সাবেক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি গুলি করে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, অপহরণ ও গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ প্রভাবশালী মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের অব্যাহত রয়েছে।

এ ছাড়া পুলিশের সাবেক দুজন মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) ২৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। পাশাপাশি আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি ও পাঁচজন সাংবাদিকও গ্রেপ্তার হয়েছেন। আরও গ্রেপ্তার হয়েছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

মামলার তদন্তের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, জুলাই-আগস্টে পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। নির্বিচার আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ছাত্র, জনতা, শিশু-কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছেন। এসব হত্যার ঘটনায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবে পুলিশ।

Table of Contents

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টে শহীদ হয়েছেন ৮৪৪ জন। আহত হয়েছেন আরও ১৩ হাজার ২৫৮ জন। পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, কেবল ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অন্তত ৩১০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় হাসিনার পাশাপাশি তাঁর সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদেরও আসামি করা হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে শেখ হাসিনাসহ অন্য নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কতটি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে, সেটির পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।

৩০০ মামলা হাসিনার বিরুদ্ধে

পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ৫ আগস্টের পর গতকাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা ও আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, গুম ও অপহরণের অভিযোগে ২৭৬টি মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানা ও আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আরও অন্তত ২৭টি। সেই হিসাবে ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৩০৩। এর মধ্যে দুই শতাধিক মামলা হচ্ছে হত্যার। তবে ঢাকার বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে কতটি মামলা হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে বিগত ছয় মাসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার বাইরে কমপক্ষে ২৫টি মামলা দায়েরের তথ্য জানা গেছে।

সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও উপদেষ্টা গ্রেপ্তার

শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে তাঁর সরকার ও দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হয়েছেন সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান। এ ছাড়া গ্রেপ্তার সাবেক ২৭ মন্ত্রী হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম, গণপূর্তমন্ত্রী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

এছাড়া আরও রয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, গণপূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস। গ্রেপ্তার মন্ত্রীদের মধ্যে কেবল সাবের হোসেন চৌধুরী ও এম এ মান্নান জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। অন্যরা সবাই কারাগারে আছেন।

এছাড়া গ্রেপ্তার অপর সাবেক তিন উপদেষ্টা হলেন বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। এই তিন উপদেষ্টার মধ্যে সালমান এফ রহমানের মোট রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে ৬০ দিন।

এর বাইরে গ্রেপ্তার অপর পাঁচ প্রতিমন্ত্রী হলেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী মাহবুব আলী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। আর প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের সব থেকে বেশি (৫৮ দিনের) রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। 

আর গ্রেপ্তার তিন সাবেক উপমন্ত্রী হলেন পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার।

সংসদ সদস্যরা বিচারের মুখোমুখি

শেখ হাসিনার পতনের পর মন্ত্রীদের পাশাপাশি গতকাল পর্যন্ত অন্তত ৩৮ জন সাবেক সংসদ সদস্য গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। 

গ্রেপ্তার সাবেক সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক চিফ হুইপ পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ, ঢাকা-৭ আসনের হাজি সেলিম, হাজি সেলিমের ছেলে সোলাইমান সেলিম, মাদারীপুর-৩ আসনের আবদুস সোবহান গোলাপ, হবিগঞ্জ-৪ আসনের সৈয়দ সায়েদুল হক, নেত্রকোনা-৫ আসনের আহমদ হোসেন, কক্সবাজার-৪ আসনের আবদুর রহমান বদি, চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম এ লতিফ, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের তানভীর ইমাম, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের আব্দুল আজিজ, ঢাকা-১০ আসনের শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বরিশাল-২ আসনের শাহে আলম তালুকদার।

কুষ্টিয়া-৪–এর সেলিম আলতাফ জর্জ, ঢাকা-১৩–এর সাদেক খান, বগুড়া-৬ আসনের রাগেবুল আহসান, রাজশাহী-৪ আসনের এনামুল হক, রাজশাহী-৬ আসনের রাহেনুল হক রায়হান, নরসিংদী-৩ আসনের সিরাজুল ইসলাম, ভোলা-২ আসনের আলী আজম মুকুল, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের জান্নাত আরা হেনরী, খুলনা-৬ আসনের রশীদুজ্জামান মোড়ল, সিলেট-২ আসনের ইয়াহিয়া চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের মহিবুর রহমান মানিক।

আরও রয়েছে খুলনা-৪ আসনের আব্দুস সালাম মুর্শেদী, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের দবিরুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও–২ আসনের মাজহারুল ইসলাম, চট্টগ্রাম-১৫–এর আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী, বরগুনা-১–এর ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, ঝিনাইদহ-২–এর তাহজীব আলম সিদ্দিকী, লক্ষ্মীপুর-১–এর এম এ আউয়াল, চট্টগ্রাম-৬–এর এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, ঝিনাইদহ-১ আসনের নায়েব আলী জোয়ার্দার, বরিশাল-৩–এর গোলাম কিবরিয়া টিপু, জামালপুর-৫ আসনের আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা-৭–এর মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।

রাজশাহী-৪–এর আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৩–এর আসাদুজ্জামান আসাদ, ঝালকাঠি-১–এর শাহজাহান ওমর, গাইবান্ধা-২–এর মাহবুব আরা বেগম গিনি, নোয়াখালী-৪–এর একরামুল করিম চৌধুরী, কুমিল্লা-৮ আসনের নাসিমুল আলম চৌধুরী, নীলফামারী-৩–এর রানা মোহাম্মদ সোহেল ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের আহমেদ নাজমীন সুলতানা ও মোসা. সাফিয়া খাতুন।

সাবেক ১১ আমলা গ্রেপ্তার

৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন অন্তত ১১ জন আমলা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মহিবুল হক, সমাজকল্যাণ ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. ইসমাইল হোসেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব আমিনুল ইসলাম খান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন।

সাবেক নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ, সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম জি কিবরিয়া মজুমদার, সাবেক যুব ও ক্রীড়াসচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব শাহ কামাল এবং নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. জাহাংগীর আলম।

পুলিশের সাবেক ২ আইজিপিসহ গ্রেপ্তার

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকারীদের গুলি করে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় পুলিশের সাবেক দুজন মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) পুলিশের অন্তত ২৮ জন সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন ও শহীদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মশিউর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন। পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান ও চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েল। 

আরও পড়ুন বৈষম্যবিরোধীরা জনমত নিয়ে দলের নাম ঘোষণা করবে 

 

1 thought on “৬ মাস গণ-অভ্যুত্থানের: সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলারা গ্রেপ্তার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *