একের পর এক অবলীলায় ইয়র্কার দিয়ে যাচ্ছেন, ব্যাটসম্যানদের ক্রমাগত বেকায়দায় ফেলছেন- বর্তমানে ক্রিকেট বিশ্বে এমন বোলারের সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত যশপ্রীত বুমরা।
বুমরার কনুই বোলিংয়ের সময় বেশি বাঁকছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা আসলে চাকিং নয়। মূলত অতিমাত্রায় প্রসারণ। শরীরবিদ্যার ভাষায় যেটাকে বলা হয় ‘হাইপারএক্সটেনশন’। জন্মগতভাবেই এই ভারতীয়র কনুই স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি প্রসারিত হয়।
একজন মানুষের হাড়ের সংযোগস্থলগুলো স্বাভাবিক সীমার চেয়ে বেশি নড়াচড়া করলে সেটাকে বলা হয় ‘হাইপারমোবিলিটি’। এই হাইপারমোবিলিটির কারণেই সাইড অ্যাঙ্গেল থেকে বুমরার বোলিং অ্যাকশন অবৈধ মনে হয়।
এ ধরনের বোলিং অ্যাকশনের সঙ্গে কিছুটা মিল পাওয়া যায় পাকিস্তানের ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ হাসনাইনের। তাঁর অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। সে বছরের জুনে আইসিসি–স্বীকৃত ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা দেওয়ার পর অ্যাকশনে কোনো ধরনের ত্রুটি ধরা না পড়লে মোহাম্মদ হাসনাইনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
কেন বুমরাকে কখনোই পরীক্ষাগারে যেতে হয়নি— বাংলাদেশের সাবেক বোলিং কোচ ইয়ান পন্ট এর ব্যাখ্যা সেই সময়ই দিয়েছিলেন।
পন্ট এক্সে বুমরার বোলিং অ্যাকশনের ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘নিয়ম হলো যখন এটা উলম্বের ওপরে থাকে, তখন কনুই ১৫ ডিগ্রির বেশি বাঁকানো যাবে না। স্পষ্টভাবে তার বাহুর সামনের বাঁক আপনারা দেখতে পারছেন। যা অতিমাত্রার প্রসারণ। যাদের হাড়ের সংযোগস্থলগুলো স্বাভাবিক সীমার চেয়ে বেশি নড়াচড়া করে, তাদের ক্ষেত্রে এভাবে বোলিং করায় কোনো বাধা নেই।’
গত জুনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া ডেভিড ওয়ার্নার অতীতে অনেকবার বুমরার মুখোমুখি হয়েছেন। বুমরাকে খেলা কেন কঠিন, ওয়ার্নার এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন পার্থ টেস্ট শুরুর আগে, ‘বুমরার বলে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তাঁর অ্যাকশনের সঙ্গে অভ্যস্ত না থাকা। আপনি যদি ওর বল আগে না খেলে থাকেন, তাহলে বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।’
হাইপারমোবিলিটির কারণে বুমরা দুই ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকেন বলে মত ইংল্যান্ডের নটিংহাম ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেকানিক্স বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পল ফেলটনের। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি টেলিগ্রাফকে ফেলটন বলেছেন, ‘একটি বিষয় হলো সে অনেক বেশি সময় ধরে বল ধরে রাখতে পারে, যেটা গতি বাড়াতে সহায়তা করে। দ্বিতীয়টি হলো বল ছাড়ার সময় সে ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি অবস্থানে যেতে পারে, যা ব্যাটসম্যানের রিঅ্যাকশন টাইম (বল ছাড়ার পর ব্যাটসম্যানের ব্যাটে পৌঁছানোর সময়) কমিয়ে দেয়।’
আরও পড়ুন বিসিবি দুই উইকেটকিপারকে মুখোমুখি করল