বিশ্বে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বাড়ি কোনগুলো? কোথায় এগুলোর অবস্থান? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে বিশ্বের দামি ১০ বাড়ির একটি তালিকা তৈরি করেছে ফোর্বস ইন্ডিয়া। দামি বাড়ির এ তালিকায় ঐতিহাসিক রাজকীয় বাড়িগুলো যেমন স্থান পেয়েছে, তেমন আধুনিক স্থাপত্যের বাড়িও যুক্ত হয়েছে। বিলাসবহুল এসব বাড়ি যেন একঝলকে বিশ্বের ধনকুবের মানুষদের জীবনধারাই তুলে ধরছে।
বাকিংহাম প্যালেস
বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল, দামি বাড়ি বাকিংহাম প্যালেস। এর অবস্থান যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। এটি ব্রিটিশ রাজার আনুষ্ঠানিক বাসভবন ও প্রশাসনিক দপ্তর। এর দাম ৪৯০ কোটি মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা প্রায়)।
মূলত ১৭০৫ সালে নির্মাণ করা হলেও প্রাসাদটিতে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু সংস্কারকাজ চালানো হয়েছে। এটি বর্ধিতও করা হয়েছে। ব্রিটিশ রাজতন্ত্র ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এটিকে। প্রাসাদে আছে নয়নাভিরাম বাগান ও বিখ্যাত ব্যালকনি। বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে জনসমক্ষে হাজির হতে রাজপরিবারের সদস্যরা ওই ব্যালকনিতে আসেন। এ ছাড়া প্রাসাদে একটি শিল্পসংগ্রহশালা ও জমকালো অনুষ্ঠানস্থল আছে।
অ্যান্টিলিয়া
২৭তলা সুউচ্চ এ বাড়ির অবস্থান ভারতের মুম্বাইয়ে। ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বাড়িটি নির্মিত হয়েছে। এর দাম ২০০ কোটি ডলার। ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের মুকেশ আম্বানি এর মালিক। বিলাসবহুল এ বাড়িতে আছে ৩টি হেলিপ্যাড, ১৬৮টি গাড়ির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন একটি গ্যারেজ, কয়েকটি সুইমিংপুল, ১টি থিয়েটার ও ১টি স্নো রুম।
ভিলা লিওপোল্ডা
বিলাসবহুল বাড়িটির অবস্থান ফ্রান্সের ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরা এলাকায়। দাম ৭৫ কোটি ডলার। নির্মাণকাল ১৯২৯ থেকে ১৯৩১ সাল। ভিলা লিওপোল্ডার মূল মালিক বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড। তাঁর স্ত্রীর জন্য ভিলাটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বাড়িটিকে সামরিক হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১৯২০-এর দশকে মার্কিন স্থপতি ওগডেন কডম্যান জুনিয়র বাড়িটিকে ‘নিও প্যালাডিয়ান মাস্টারপিস’-এ পরিণত করেন।
ভিলা লে সেদ্রেস
আনুমানিক ৪১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের প্রাসাদের মালিক: ডেভিড কিউনিক (এর আগে মালিক ছিল ক্যাম্পারি গ্রুপ)সেন্ট-জ্যাঁ-ক্যাপ-ফেরাত, ফ্রান্স। ভিলা লেস সিড্রেস সেন্ট-জ্যাঁ-ক্যাপ-ফেরাত এলাকায় অবস্থিত এবং এটি তার বিলাসিতা ও বিশাল বাগানের জন্য বিখ্যাত। এটি এক সময় বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ডের মালিকানাধীন ছিল এবং পরে ক্যাম্পারি গ্রুপ এটি কিনে নেয়। এতে প্রায় ১৪ হাজার বর্গফুটের বিশাল উদ্ভিদবিজ্ঞান বাগান এবং অসংখ্য দুর্লভ উদ্ভিদের সংমিশ্রণ রয়েছে। এর অভ্যন্তরে বিলাসবহুল সজ্জা ও প্রাচীন আসবাবপত্রের ব্যবহারে ঐতিহাসিক ও নান্দনিক অনুভূতি পাওয়া যায়। এর মালিকানা স্থানান্তরের মাধ্যমে এটি বিভিন্ন সময়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এবং পৃথিবীর সবচেয়ে দামী বাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম।
লেস পালাইস বুলস
ফ্রান্সের কানে এ বাড়ির অবস্থান। বিলাসবহুল বাড়িটির দাম ৪২ কোটি ডলার। নির্মাণকাল ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৯ সাল। ১ হাজার ২০০ বর্গমিটারের (প্রায় ১৩ হাজার বর্গফুট) এ বাড়িতে আছে একটি অভ্যর্থনা হল, ৫০০ আসনে একটি ছাদখোলা অ্যাম্ফিথিয়েটার, ১০টি শোবার ঘর, কয়েকটি সুইমিংপুল ও কৃত্রিম জলপ্রপাত। বাড়িতে ১০টি শোবার ঘর ও ১১টি শৌচাগার আছে।
অ্যান্টিলিয়া, মুম্বাই, ভারত
আনুমানিক ১ থেকে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের আলিশান এই প্রাসাদের মালিক: মুকেশ আম্বানি (রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান)
অ্যান্টিলিয়া বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল ব্যক্তিগত বাসস্থান, যা ভারতের মুম্বাই শহরের একটি ব্যস্ততম এলাকায় অবস্থিত। ২৭ তলা এই বাড়িটি প্রায় ৪,০০,০০০ স্কোয়ার ফিট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং এতে বিলাসবহুল সুবিধার আধিক্য রয়েছে। এই প্রাসাদটির নকশা করেছেন চিকাগো ভিত্তিক আর্কিটেকচার ফার্ম পারকিন্স এবং উইল। এতে জিম, স্পা, সিনেমা হল, সুইমিং পুল এবং হেলিপ্যাড সহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। এর কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে সক্ষম। এর ভেতরে ও বাইরে বিলাসবহুল সজ্জা, নকশা, এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে যা একে অনন্য করে তুলেছে। মুকেশ আম্বানি এবং তার পরিবারের সদস্যদের আবাসস্থল হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।
১৮-১৯ কেন সিং টন গার্ডেনস
লন্ডনে কেনসিংটন এলাকায় অবস্থিত ‘১৮-১৯ কেনসিংটন গার্ডেনস’ একটি মর্যাদাপূর্ণ ঠিকানা। বিলিয়নিয়ারস রো নামে পরিচিত বিশেষ এ সড়কে বিশ্বের কয়েকটি ব্যয়বহুল বাড়ি রয়েছে। এ সড়কে অনেকগুলো কূটনৈতিক মিশনের অবস্থান। ১৮-১৯ কেনসিংটন গার্ডেনস বাড়িটির দাম ২২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর নির্মাণকাল ১৮৪৭ সাল।
বিয়ন্স অ্যান্ড জে-জেড মালিবু ম্যানশন
বিয়ন্স ও জে-জেড দুজনই সংগীতজগতে আলোচিত দুই নাম। বিলাসিতায়ও তাঁরা কম যান না। যুক্তরাষ্ট্রের মালিবুতে তাঁদের বাড়িটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাড়িগুলোর একটি। যথেষ্ট প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের উপযোগী করে বাড়িটি তৈরি করা হয়েছে। এখান থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়। বাড়ির নির্মাণকাল ১৯৯৯ থেকে ২০১৪ সাল। এর দাম ২০ কোটি ডলার।
এলিসন এস্টেট
ওরাকল করপোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন এ সম্পত্তির মালিক। এর নকশা জাপানি ঢঙে করা। এলিসন স্টেটে কয়েকটি ভবন, বাগানসহ বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত এ এস্টেটের দাম ২০ কোটি ডলার। নির্মাণকাল ২০০৪ সাল।
আরও পড়ুন কাঁদবেন কেন? কান্নার ১০ উপকারিতা
1 thought on “বিশ্বের সবচেয়ে দামি বাড়ি কোনগুলো”