বাংলা সাহিত্যবিষয়ক পাঠ্যবইয়ে আগামী ২০২৫ সালের নবম-দশম শ্রেণির সাতটি গদ্য ও চারটি কবিতা বাদ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া একটি উপন্যাস বাদ দিয়ে আরেকটি উপন্যাস যুক্ত করা হচ্ছে। একই শ্রেণির ইংরেজি বই থেকে একটি অধ্যায় বাদ দেওয়া হচ্ছে। সেই বইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি নিয়ে লেখাসহ মোট নতুন তিনটি অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে।
যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা
শুধু নবম-দশম শ্রেণি নয়, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবইয়েও বিভিন্ন প্রবন্ধ ও কবিতা সংযোজন-বিয়োজন হচ্ছে। যেখানে নতুন করে স্থান পাচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু। বিনা মূল্যের এসব পাঠ্যবই হাতে পাবে শিক্ষার্থীরা আগামী জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য। এনসিটিবি জানিয়েছে, প্রায় ৪০ কোটি ৩৯ লাখ বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য এবার মোট পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা । পুরোনো শিক্ষাক্রমে বই বেশি হওয়ায় এবার মোট বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। তবে বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন পাঠ্যবই দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা আছে।
চলতি বছরে ২০২৪ সালে প্রাথমিককে পঞ্চম ও মাধ্যমিককে দশম বাদে সব শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু ছিল। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর চতুর্থ, পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর মধ্য দিয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণিতেই তা চালুর কথা ছিল; কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে নতুন শিক্ষাক্রম কার্যত বাতিল হয়ে গেছে। এখন ২০১২ সালে প্রণয়ন করা পুরোনো পাঠ্যবই পরিমার্জনের জন্য ৪১ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছেন।
এনসিটিবির সূত্রমতে, জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি প্রথমে পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হলেও পরে সিদ্ধান্ত হয় । কিন্তু পরে স্বীদ্ধান্ত হয় যে, বইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু নিয়ে কবিতা ও প্রবন্ধ বা গদ্য যুক্ত হবে শুধু মাত্র পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে।
যেসব বিষয় বাদ ও যুক্ত হচ্ছে
এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য নামের পাঠ্যবইয়ে জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ এবং জহির রায়হানের ‘একুশের গল্প’ নামে একটি সংকলিত গদ্য যুক্ত করা হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে বইয়ে থাকা জহির রায়হানের ‘বাঁধ’ গদ্যসহ মোট সাতটি গদ্য বাদ যাচ্ছে। বাদ দেওয়া বাকি ছয়টি গদ্য হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দেনাপাওনা’, কবীর চৌধুরীর ‘পয়লা বৈশাখ’, হুমায়ূন আহমেদের ‘নিয়তি’ মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’, সেলিনা হোসেনের ‘রক্তে ভেজা একুশ’, এবং ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘তথ্যপ্রযুক্তি’। অবশ্য একই পাঠ্যবইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সুভা’ ও ‘লাইব্রেরি’ গদ্য দুটি আগের মতোই রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘লাইব্রেরি’ গদ্যটি বাদ গেলেও তাঁর লেখা ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ গল্পটি রয়েছে। আর হুমায়ূন আহমেদের ‘নিয়তি’ গদ্য বাদ দেওয়া হলেও তাঁর উপন্যাস ‘১৯৭১’ যুক্ত করা হচ্ছে পাঠ্যবইয়ে। বাদ দেওয়া হচ্ছে সেলিনা হোসেনের ‘কাকতাড়ুয়া’ উপন্যাসটি।
অন্যদিকে চারটি কবিতা বাদ দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য নতুন কবিতা যুক্ত করা হচ্ছে না। যে চারটি কবিতা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো হলো কাজী নজরুল ইসলামের ‘আজ সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’, নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা, এ শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ এবং কামাল চৌধুরীর ‘সাহসী জননী বাংলা’। কাজী নজরুল ইসলামের অপর দুটি কবিতা ‘মানুষ’ ও ‘উমর ফারুক’ রাখা হচ্ছে।
নবম-দশম শ্রেণির ‘ইংলিশ ফর টুডে’ নামের ইংরেজি বইয়ে একটি অধ্যায় বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটি হলো ইউনিট ওয়ান হিসেবে থাকা ‘ফাদার অব দ্য নেশন’। অন্যদিকে ‘সেন্স অব সেলফ’, ‘লোনলিনেস’ এবং ‘গ্রাফিতি (জুলাই বিপ্লবের ওপর লেখা) ’ নামে নতুন তিনটি অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া এত দিন ধরে চলা পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তাঁর উদ্ধৃতি বাদ যাচ্ছে। একই সঙ্গে ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইতিহাসবিষয়ক পাঠ্যপুস্তকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পর্যন্ত বিষয়বস্তু স্থান পেয়েছে। তাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তু সাহিত্যের ধাঁচে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি যুক্ত করা হচ্ছে। আর পাঠ্যবইয়ে দলীয় প্রচার-প্রোপাগান্ডার বিষয়গুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে।
1 thought on “নবম-দশম শ্রেণির বইতে ৭ গদ্য, ৪ কবিতা বাদ।”