সারা পৃথিবীতে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় নানা নকশার, নানা সৌন্দর্যের মসজিদ গড়ে উঠেছে। কিছু কিছু মসজিদ এতটাই দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে, শুধু মুসলিম পর্যটক নন, যেগুলো দেখতে সারা দুনিয়া থেকে অনেক অমুসলিম ও ভিড় করেন।
বিশ্বে দৃষ্টিনন্দন হিসেবে খ্যাতি পাওয়া ১০টি মসজিদসংক্রান্ত তথ্য পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
১ শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদের অবস্থান সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে । এখানেই বিছানো আছে বিশ্বের হাতে গোনা সবচেয়ে বড় গালিচাটি । গালিচাটি তৈরি করেছিলেন ১ হাজার ২০০ জন কারিগর মিলে ।
শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে ১২ টনের একটি বিশাল ঝাড়বাতি আছে। এটি ক্রিস্টালের তৈরি।
মামলুক, ফাতিমি ও ওসমানীয় সাম্রাজ্যের মিশ্র ধাঁচে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে। টেলিগ্রাফ ট্রাভেলসের আবুধাবিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এ মসজিদকে ‘যুগান্তকারী ভবন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
২ আল আকসা মসজিদ
ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় জেরুজালেমের দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির নাম রয়েছে। ‘হারাম আল শরিফ’ নামে পরিচিত চত্বরের ভেতর আল আকসার অবস্থান। এটি ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিভিন্ন সময় ভূমিকম্পে আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। বেশ কয়েকবারই এটিকে পুনর্গঠন করা হয়েছে। মধ্যযুগীয় ক্রুসেডাররা এটিকে প্রাসাদ হিসেবে ব্যবহার করত। পরে ইসলামি খেলাফতের অধীনে এর সংস্কার করে আবারও এটি প্রার্থনার স্থানে পরিণত করা হয়।
৩ মসজিদুল হারাম
৯৯ একর জায়গাজুড়ে সৌদি আরবের মক্কা শহরে অবস্থিত (আরবি: المسجد الحرام) ইসলামের পবিত্রতম স্থান এবং মুসলমানদের প্রধান কিবলা। মসজিদের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, এটি মুসলমানদের নামাজের সময় মুখ করে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হজ ও উমরার সময় কাবা শরিফ তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) করা হয়। এখানে ৪০ লাখ মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।মসজিদের ভেতরে ও বাইরে দুই জায়গাতেই নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা আছে।
‘হাজরে আসওয়াদ’ বা কালো পাথরের অবস্থান পবিত্র কাবাঘরের দেয়ালে স্থাপিত। মুসলিম ব্যতিত কোন অমুসলিমদের মক্কায় ঢোকার অনুমতি নেই। এই মসজিদটি পৃথিবীর বৃহত্তম মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এর সম্প্রসারণ প্রকল্পের ফলে এর ধারণক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪ মসজিদে নববি
মসজিদে নববি (আরবি: المسجد النبوي) ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম মসজিদ এবং এটি সৌদি আরবের মদিনা শহরে অবস্থিত। এই মসজিদটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিষ্ঠিত। মসজিদের ভেতরে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র রওজা (সমাধি) অবস্থিত। তাঁর দুই মহান সাহাবি, আবু বকর (রা.) এবং উমর (রা.)-এর সমাধিও এখানে। এটি মসজিদে নববির একটি বিশেষ স্থান, যা কাঁচা ঘাসের জান্নাতের টুকরো হিসেবে পরিচিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মিম্বার ও তাঁর রওজার মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের একটি অংশ। এটি সেই স্থান যেখানে রাসূলুল্লাহ (সা.) বসে ইসলামি শিক্ষাদান করতেন এবং গুরুত্বপূর্ণ খুতবা দিতেন। মসজিদের অন্যতম চিহ্নিত বৈশিষ্ট্য, যা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারকের উপরে অবস্থিত। এটি মুসলিম স্থাপত্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই মসজিদটি রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিদের জীবনযাপনের সাক্ষী। এটি ইসলামের সোনালি যুগের স্মারক এবং মুসলিম ঐতিহ্যের ধারক।
৫ আয়া সোফিয়া
আয়া সোফিয়া (তুর্কি: Ayasofya; গ্রিক: Αγία Σοφία) বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যকীর্তি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এটি তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত এবং এর দীর্ঘ ইতিহাসের কারণে এটি একাধিক ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ভবনটিতে মিহরাব, মিম্বার ও খুতবা দেওয়ার জায়গা তৈরি করা হয়। আয়া সোফিয়া মসজিদটি মোজাইক দিয়ে তৈরি করা। সেখানে আরবি ভাষায় পবিত্র কোরআনের আয়াতও খোদাই করা আছে। রাজকীয় ধাঁচের পুরোনো এ মসজিদটির একটি অংশ বর্তমানে জাদুঘরে পরিণত হয়েছে।
৬ ফয়সাল মসজিদ
বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদগুলোর একটি এটি। এর অবস্থান পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে। ফয়সাল মসজিদের সমসাময়িক নকশাটি করেছেন তুরস্কের স্থপতি বেদাত দলোকায়। মক্কার কাবা শরিফ এবং বেদুইন তাঁবু থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এর কংক্রিটের ছাদটিকে আটটি অংশে ভাগ করা হয়েছে।
৭ সুলতান সালাহউদ্দিন আবদুল আজিজ শাহ মসজিদ
মালয়েশিয়ার সেলানগরে এ মসজিদের অবস্থান। একসঙ্গে ২৪ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন এই মসজিদে। এটি দেশটির বৃহত্তম মসজিদ। সেখানে মিসরের এক ক্যালিগ্রাফারের ক্যালিগ্রাফি খোদাই করা আছে। মসজিদটির জানালার কাচগুলোও দৃষ্টিনন্দন। ইস্পাতের আবরণে ঢাকা এর গম্বুজগুলোয় পবিত্র কোরআনের আয়াত খোদাই করা আছে।
৮ দ্বিতীয় হাসান মসজিদ
দ্বিতীয় হাসান মসজিদের অবস্থান মরক্কোতে। এ মসজিদে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মিনার। মিনারটির উচ্চতা ২১০ মিটার। মসজিদটি বিশ্বের বৃহত্তম মসজিদগুলোর একটি। মরক্কোতে এটিই একমাত্র মসজিদ, যেখানে মুসলিমদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষেরা প্রবেশ করতে পারেন।
কাসাব্লাঙ্কায় সাগরের কোল ঘেঁষে মসজিদটি গড়ে উঠেছে। এখানকার স্বচ্ছ কাচের তৈরি মেঝে দিয়ে নিচের দিকে তাকালে সাগরের পানি দেখা যায়।
৯ সুলতান কাবুস মসজিদ
সুলতান কাবুস মসজিদের অবস্থান ওমানে। মাসকট শহরের একটি সড়কপথের পাশে এটি গড়ে উঠেছে। সুলতান কাবুস মসজিদের বাগানের ভেতরে একবার ঢুকলেই মন যেন প্রশান্তিতে ভরে যায়। এখানকার মার্জিত তোরণে এ স্থানটি ওমানের একটি দৃষ্টিনন্দন স্থানে পরিণত হয়েছে।
মসজিদের কেন্দ্রীয় মিনারটি ৯১ দশমিক ৫ মিটার (৩০০ ফুট) উঁচু। মসজিদে নামাজ আদায়ের মূল অংশটিতে একটি পার্সিয়ান গালিচা বিছানো। ৬০০ নারী চার বছর ধরে গালিচাটি তৈরি করেছেন।
১০ তাজ-উল-মসজিদ
তাজ–উল–মসজিদ নামের অর্থ মসজিদের তাজ। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের ভোপাল এলাকায় এ মসজিদের অবস্থান। এতে ১৮ তলা উচ্চতার সমান দুটি মিনার আছে। মসজিদের গম্বুজগুলো মার্বেল পাথরের। মসজিদের প্রবেশদ্বারটি দ্বিতল।
তাজ–উল–মসজিদ ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় মসজিদ।