বিসিবি

বিসিবিতে যেভাবে ‘নিজের রাজ্যত্ব’ গড়ে তোলেন নাজমুল হাসান পাপন

খেলাধুলা
Spread the love

বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ‘ভালোবাসা’র জালে আটকে রেখেছিলেন স্বয়ং ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকেরা, যাঁরা দেশের ক্রিকেটটাকে এতগুলো বছর ধরে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন।বিশেষ করে বিসিবিতে যেভাবে ‘নিজের রাজ্যত্ব’ গড়ে তোলেন সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তা বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতিরই খেলা।

অতি সম্প্রতি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বেশির ভাগ ক্রিকেট পরিচালকই দৃশ্যপট থেকে উধাও। এমনকি সদ্য বিদায়ী আওয়ামীলীগ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীত্ব  পাওয়ার পরও  ক্রিকেট বোর্ড ছাড়তে না পারা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান নিজেও দেশ ত্যাগ করেছেন বলে শোনা যায়।

 অথচ নাজমুল হাসানদের  অন্যায্য দাবির চাপে প্রায় এক যুগ ধরে এ দেশে ক্রিকেটের যথেচ্ছ অপব্যবহার হয়েছে, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতির কাঁটায় বিদ্ধ হয়েছে খেলা, ক্রিকেট আর তরুণ-প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ হয়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন।

শেখ হাসিনা সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সরকার মনোনীত সভাপতি হিসেবে নাজমুল হাসান প্রথম বিসিবির দায়িত্ব নেন ২০১২ সালে। এরপর আইসিসির বাধ্যবাধকতার কারণে ২০১৩ সালের অক্টোবরে সভাপতি হন বিসিবির পরিচালকদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে। তারপর আর কখনো পদ ছাড়তে হয়নি। আরও দুটি নির্বাচনেও নির্বাচিত হয়ে এখনো নাজমুলই বিসিবি সভাপতি।

জাতীয় ও অন্যান্য নির্বাচনের মতই  বিসিবির নির্বাচনের প্লটটাই এমনভাবে সাজানো থাকে যে নির্বাচিত হয়ে আসা পরিচালকদের বেশির ভাগই হন সমমনা। তাঁদের ভোটে সভাপতি নির্বাচনটাও অনেকটা নিয়ম রক্ষার।  এ ছাড়া প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পুত্র নাজমুল হাসান পারিবারিকভাবেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। বিসিবির পরিচালনা পরিষদে সভাপতি হতে সাহস করে তাঁর বিপক্ষে দাঁড়ানোর চিন্তাও কেউ কখনো করেননি। আর এই সুযোগে একচ্ছত্র আধিপত্য পেলে যা হয় সভাপতি পাপন নিজের ক্ষমতার অপব্যহার দেখিয়ে দিয়েছেন দেশের ক্রিকেটকে।

প্রায় ১২ বছর ধরে বিসিবির সভাপতি থাকা নাজমুল ও তাঁর পারিষদরা, সুকৌশলে দেশের ক্রিকেটের শিকড় ঘরোয়া ক্রিকেট যেটাকে একরকম ধ্বংসই করে দিয়েছে ।

 

দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বিপিএল আজ পর্যন্ত পায়নি পেশাদার কাঠামো। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মান যে এখনো অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে, তার প্রমাণ টেস্টের হতাশাজনক ফলাফল। যে ক্রিকেটে প্রাণ ছিল সেই ঢাকা লিগের কথা যদি বলেন, সেটাকে বানিয়ে ফেলা হয়েছে বিসিবির ভোটের রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার।

 তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের এন্ট্রি ফি ১ লাখ টাকা থেকে একলাফে ৫ লাখ টাকা করে দেওয়া হয় ২০১৪ সালে ,যার ফলে ঢাকা লিগের গোড়াটাই পচিয়ে ফেলা হয়। শুরুতে প্রতি মৌসুমে তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট খেলত একাডেমি পর্যায়ের পঞ্চাশের অধিকট দল। হাজার–বারো শ  তরুণ উঠতি ক্রিকেটার সুযোগ পেত প্রতিভার প্রথম ঝলক দেখানোর। তাতে ক্লাব ক্রিকেট সমৃদ্ধ হতো, দেশের ক্রিকেটার সরবরাহের পাইপ লাইন স্বাস্থ্যবান থাকত। একমাত্র  স্কুল ক্রিকেট ছাড়া এত তরুণ প্রতিভা দেখানোর সুযোগ  আর কোনো প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে আগেও ছিল না, এখন তো নেই-ই।

যেকোন  টুর্নামেন্টে বেশি ক্রিকেটারের অংশগ্রহণ মানেই বেশি বেশি প্রতিভা উঠে আসার সম্ভাবনা। কিন্তু এন্ট্রি ফি পাঁচ লাখ টাকা করার পর দেখা গেল, কোনো একাডেমি দলই আর তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে অংশ নিচ্ছে না।  কিন্তু এন্ট্রি ফি পাঁচ লাখ টাকা করার পর পাড়া-মহল্লাভিত্তিক কোনো একাডেমি দলই আর তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে অংশ নিতে পারল না। অনেকের সারা বছরের বাজেটই যে পাঁচ লাখ টাকা ছিল না!

 

টুর্ণামেন্টে যেন অংশ নিতে না পারে এজন্যই মনে হয় নিয়ম আরও কড়া হলো। শর্ত দেওয়া হলো সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের নিবন্ধন ছাড়া কোনো একাডেমি বা ক্লাব তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে অংশ নিতে পারবে না।

এইভাবে অন্যান্য একাডেমি দলের সরে যাওয়ার সুযোগে ১০ বছর ধরে বোর্ড–কর্তা ব্যক্তিদের দুটি করে ক্লাব না খেলেই তৃতীয় বিভাগে উঠেছে, এমন কি  তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ের চ্যাম্পিয়ন-রানার্সআপ নির্ধারিত হয়েছে টসের মাধ্যমে, কখনোবা একটি আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার‘ফাইনাল’ খেলে।

1 thought on “বিসিবিতে যেভাবে ‘নিজের রাজ্যত্ব’ গড়ে তোলেন নাজমুল হাসান পাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *